স্টাফ রিপোর্টার
নাটোরের গুরুদাসপুরে টাকা ও চিকিৎসার অভাবে মরতে বসা চারটি পরিবারের মাঝে আশার আলো জ্বালালেন আমেরিকার ওকলাহোমা প্রবাসী মো. রাসেল হোসাইন। মঙ্গলবার দুপুরে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স মিলনায়তনে রাসেলের পক্ষে ৭ লাখ টাকা চিকিৎসা সহায়তা দেন তার বাবা মুক্তিযোদ্ধা রবিউল ইসলাম।
ব্রেস্ট ক্যান্সারে আক্রান্ত রঞ্জনা রানী, গুরুতর আহত কৃষক বুদ্দু মিয়া, চোখে আঘাত পাওয়া শ্রমজীবী নারী আমেনা বেগম এবং একাকী জীবনযাপনরত বিধবা সুকজান বেওয়ার মতো চারজন মানুষ রাসেল হোসাইনের সহানুভূতির ফলে ফিরে পেয়েছেন নতুন জীবনের আশা।
গুরুদাসপুর উপজেলার পোস্ট অফিস পাড়ার বাসিন্দা রঞ্জনা রানী। চিকিৎসার জন্য ভারতের টাটা মেমোরিয়াল হাসপাতালে গিয়েছিলেন। কিন্তু অর্থ সংকটে থেমে যায় তার চিকিৎসা। জানতে পেরে প্রবাসী রাসেল তাঁর চিকিৎসার জন্য ৬ লাখ টাকা অনুদান দেন।
বিলহরিবাড়ী গ্রামের কৃষক বুদ্দু মিয়া মাঠে কাজ করতে গিয়ে পায়ে মারাত্মক আঘাত পান। সময়মতো চিকিৎসা করাতে না পেরে তিনি পঙ্গুত্ববরন করছিলেন। ৪০ হাজার টাকায় চিকিৎসা হলে তার পঙ্গু জীবন থেকে মুক্তি পাবেন। সেই অর্থ দিয়ে তাঁর চিকিৎসার সুযোগ তৈরি করে দেন প্রবাসী রাসেল।
সাবগাড়ী এলাকার নারী শ্রমিক আমেনা বেগম ধান মাড়াইয়ের সময় দুর্ঘটনায় এক চোখের দৃষ্টিশক্তি হারান। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, অপারেশন করে দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে আনা সম্ভব। প্রবাসী রাসেল তার চিকিৎসার জন্য ৩০ হাজার টাকা দিয়েছেন।
একই এলাকার দরিদ্র বিধবা সুকজান বেওয়া নানা রোগে ভুগছেন। কিন্তু দিনমজুরির টাকায় চিকিৎসা করানো তাঁর পক্ষে সম্ভব নয়। এই অন্তিম মূহুর্তে রাসেল হোসাইন ৩০ হাজার টাকা দিয়ে তাঁর সহায়তায় এগিয়ে আসেন।
কৃষক বুদ্দু মিয়া বলেন, “রাসেল সাহেব না থাকলে হয়তো কোনোদিন আর হাঁটাই হতো না। আল্লাহ তাকে অনেক ভালো রাখুক।”
রঞ্জনা রানী বলেন, “অর্থাভাবে আমার চিকিৎসা থেমে গিয়েছিল। বাঁচার সম্ভাবনা ছিলনা। রাসেল হোসাইন আমার জীবন ফিরে পেতে সহায়তা করে চিরঋণী করেছেন। বুঝলাম এতদিনে, ভালোবাসা ও সহানুভূতি এখনও বেঁচে আছে।”
প্রবাসী রাসেল হোসাইন মুঠোফোনে জানান, “মানুষ মানুষের জন্য, এই বিশ্বাস থেকেই আমি কাজ করি। আমার ক্ষুদ্র চেষ্টা যদি কারও জীবন রক্ষা করতে পারে, সেটাই আমার সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি। দেশ থেকে দূরে থাকলেও দেশের মানুষের পাশে থাকতে চাই সবসময়।”
বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. রবিউল ইসলাম বলেন, “আমরা যে দেশের জন্য যুদ্ধ করেছি, সেই দেশের মানুষ যদি কষ্টে থাকে, তবে সেটা আমরা মেনে নিতে পারি না। আমার ছেলের এই মানবিকতা অবশ্যই গর্বের।