স্টাফ রিপোর্টার
নাটোর শহরের জনসেবা হাসপাতালের মালিক বিএমএ ও ড্যাবের নাটোর জেলা শাখার আহবায়ক ডা. এএইচএম আমিরুল ইসলামকে প্রেম ও চাকুরিীচ্যুতির ঘটনায় জবাই করে হত্যা করে তারই পিএ আসাদ। নিহত চিকিৎসকের পিএ আসাদ বোরকা পড়ে রাতে খাটের নিচে লুকিয়ে থাকেন। এরপর ঘুমন্ত অবস্থায় চিকিৎসক আমিরুলকে ছুরি দিয়ে জবাই করে হত্যা করে। আজ মঙ্গলবার ( ২ জুলাই) সন্ধ্যা ৬টার দিকে জনসেবা ক্লিনিকে নাটোর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আমজাদ হোসাইন প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব কথা বলেন ।গত সোমবার জনসেবা ক্লিনিক থেকে ডা. এএইচএম আমিরুল ইসলামের গলা কাটা লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।

পুলিশ সুপার বলেন, ঘটনার পর থেকে তথ্য ও প্রযুক্তিগত বিশ্লেষণের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু করে পুলিশ। বিভিন্ন সংস্থার সহায়তায় যৌথভাবে কাজ করার একপর্যায়ে হাসপাতালের স্টাফ আসাদুল ইসলাম আসাদকে মূল আসামি হিসেবে শনাক্ত করা হয়। আসাদ বগুড়ার ধুনট উপজেলার বাসিন্দা। ২০২৪ সালে এসএসসি পাশের পর তিনি টিএমএসএস মেডিকেলে ল্যাব অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে চাকরি শুরু করেন। পরে নাটোরে ডা. আমিরুল ইসলামের পিএ হিসেবে তিন বছর ধরে কর্মরত ছিলেন জনসেবা ক্লিনিকে। কর্মরত অবস্থায় হাসপাতালের এক নারী স্টাফকে ঘিরে ডা. আমিরুল, ওই নারী এবং আসাদের মধ্যে সম্পর্কের টানাপোড়েন সৃষ্টি হয়। এ নিয়ে দ্বন্দ্বের একপর্যায়ে গত ২৫ আগস্ট ডা. আমিরুল ওই নারী স্টাফ এবং আসাদকে মারধর করেন এবং চাকরি থেকে আসাদ বরখাস্ত করেন। এরপর আসাদ বগুড়ায় ফিরে গেলেও তার মধ্যে প্রতিহিংসার জন্ম হয়। প্রতিশোধ নিতে তিনি বগুড়া থেকে একটি বোরকা ও দুটি ছুরি কিনে ফের নাটোরে ফিরে আসেন।
পুলিশ সুপার আরও জানান, ৩১ আগস্ট সন্ধ্যায় বোরকা পরে আসাদ ডা. আমিরুল ইসলামের চেম্বারের কক্ষে প্রবেশ করেন এবং খাটের নিচে লুকিয়ে থাকেন। রাত ১টার দিকে ডাক্তার নিজের কক্ষে ফিরে আসেন এবং ওষুধ সেবন শেষে ঘুমিয়ে পড়েন। ভোররাত সাড়ে ৩টার দিকে গভীর ঘুমের মধ্যে থাকা ডা. আমিরুলের ওপর আসাদ ঝাঁপিয়ে পড়েন এবং তাকে হত্যা করেন। পরে ভোর সোয়া ৬টার দিকে ক্লিনিক থেকে বেরিয়ে যান আসাদ। যাওয়ার পথে তিনি বোরকাটি সিংড়া আইসিটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র এলাকার নদীতে এবং দুটি ছুরি নন্দীগ্রাম এলাকায় ফেলে দেন।

পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আমজাদ হোসাইন আরও বলেন, ‘আমরা ঘটনার পর থেকেই প্রযুক্তিগত ও পারিপার্শ্বিক তথ্য বিশ্লেষণ করেছি। সন্দেহভাজনদের জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে মূল আসামি আসাদকে শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে। আসাদ দীর্ঘদিন ডা. আমিরুল ইসলামের পিএ হিসেবে কাজ করায় তার চলাফেরা ও অভ্যাস সম্পর্কে বিস্তারিত জানতেন।
ব্যক্তিগত দ্বন্দ্ব ও প্রতিহিংসার জেরেই তিনি এই হত্যাকাণ্ড ঘটান। যে বিষয়গুলো সামনে এসেছে এবং আদালতে তিনি স্বীকারোক্তিও দিতে রাজি হয়েছেন। মূলত ক্ষোভের বসেই তিনি এ কাজ করেছেন।’ উল্লেখ্য গতকাল সোমবার নাটোর শহরের মাদরাসা মোড় জনসেবা ক্লিনিক থেকে ডা. এএইচএম আমিরুল ইসলামের গলা কাটা লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। তার নিম্নাঙ্গ কাটা ছিল।আমিরুল ইসলাম ওই ক্লিনিকের মালিক ছিলেন।