স্টাফ রিপোর্টার
নাটোরের বড়াইগ্রামে এক ব্যবসায়ী ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের মারধর করার ঘটনায় বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠনের ১৫ নেতা-কর্মীর নামে মামলা হয়েছে। মামলায় অজ্ঞাতনামা আরও ১৫ জনকে আসামি করা হয়েছে। এ ঘটনায় পুলিশ বনপাড়া পৌরসভার কালিকাপুর মহল্লার বাসিন্দা ও পৌর শ্রমিক দলের আহ্বায়ক জালাল ভূঁইয়া (৩৮) গ্রেফতার করে।
ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী উজ্জ্বল কুমার মণ্ডল (২৫) বনপাড়া পৌরসভার কালিকাপুর শ্মশানঘাট এলাকার বিশ্বনাথ মণ্ডলের ছেলে। এ ঘটনায় গতকাল রোববার রাতে বড়াইগ্রাম থানায় মামলা করেন উজ্জ্বল কুমার মণ্ডলের শ্বশুর কৃষ্ণচন্দ্র মণ্ডল।
মামলার আসামিরা হলেন বনপাড়া পৌরসভার কালিকাপুর মহল্লার বাসিন্দা ও পৌর শ্রমিক দলের আহ্বায়ক জালাল ভূঁইয়া (৩৮)পৌর স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক নুর আলম (৩২) সরদারপাড়ার বাসিন্দা ও বনপাড়া পৌর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ইকবাল হোসেন (৪৫)বনপাড়া পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি শাহাবুল আলম (৫৫)কলেজপাড়ার বাসিন্দা ও উপজেলা শ্রমিক দলের আহ্বায়ক মুন্নাফ খান (৫০), মান্নান খান (৫২)পৌর ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক মো. সুজন (২৫); পাঠানপাড়ার বাসিন্দা ও পৌর যুবদলের সিনিয়র সহসভাপতি জাহাঙ্গীর হোসেন (৩৭) উপজেলা পরিষদ চত্বরের মো. রনি (২৮) মালিপাড়ার সলেমান মোল্লা (৪৫) কালিকাপুরের বাসিন্দা ও ৮ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি দুলাল কবিরাজ (৪৫) হালদারপাড়ার মো. শাহিন (৩৫) ও মো. নয়ন (৩২)।
মামলার এজাহারে বাদী অভিযোগ করেন, রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর থেকে আসামিরা তাঁর জামাতা উজ্জ্বল কুমার মণ্ডলের কাছে দুই লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে আসছিলেন। চাঁদা দিতে না পারায় তিনি ঢাকায় পালিয়ে গিয়ে আত্মগোপন করেছিলেন। ২০ নভেম্বর বিকেলে উজ্জ্বল বাড়িতে যান। আসামি ইকবাল হোসেনের নেতৃত্বে আসামিরা বাড়ি ঘেরাও করেন। আসামি জালাল ভূঁইয়া তাঁর বুকে পিস্তল ঠেকিয়ে পকেট থেকে দুই হাজার টাকা বের করে নেন। বাকি টাকা দিতে না পারায় আসামিরা লোহার পাইপ ও রড দিয়ে পিটিয়ে তাঁর বাঁ হাত, বাঁ পা ও বুকের হাড় ভেঙে ফেলেন। তাঁকে রক্ষা করতে গেলে আসামিরা তাঁর মায়ের বুকে লাথি মেরে ফেলে দেন। অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী সুবর্ণা মণ্ডল তাঁকে রক্ষা করতে গেলে আসামি জালাল ভূঁইয়া তাঁকে লাথি মারেন। একপর্যায়ে প্রতিবেশীরা আহত ব্যক্তিদের উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে পাঠান। আসামিদের হুমকির মুখে মামলা করতে কিছু দেরি হয়েছে বলে এজাহারে উল্লেখ করা হয়।গত বুধবার বড়াইগ্রাম উপজেলার কালিকাপুর গ্রামে উজ্জ্বল কুমার মণ্ডলকে বেধড়ক পেটানোর পর পুলিশে সোপর্দ করা হয়। স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতার সঙ্গে চলাফেরা করায় বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা তাঁকে পেটান বলে অভিযোগ ওঠে। ওই ঘটনার একটি ভিডিও শুক্রবার ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। এরপর বিভিন্ন গণমাধ্যমে এ বিষয়ের সংবাদ প্রকাশিত হয় ।বিষয়টি জানার পর বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী গতকাল রোববার নাটোরে এসে ভুক্তভোগী ও বড়াইগ্রাম থানা-পুলিশের কাছে খোঁজখবর নেন। তিনি সংবাদ সম্মেলন করে অবিলম্বে ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানান। এ বিষয়ে বড়াইগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সিরাজুল ইসলাম বলেন, মামলায় মারধর ও চাঁদা দাবির অভিযোগ করা হয়েছে। মামলার এজাহারভুক্ত আসামি জালাল ভূঁইয়াকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠানো হয়েছে। অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।