স্টাফ রিপোর্টার
নাটোরের বড়াইগ্রামে বৃদ্ধ মা–বাবা ও অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীর সামনে উজ্জ্বল কুমার মন্ডল (২৫) নামের এক ব্যবসায়ীকে বেধড়ক পেটানোর একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক আতিকুর রহমানের সঙ্গে চলাফেরা করায় বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতা–কর্মীরা তাঁকে পেটান বলে অভিযোগ করেছেন স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা।
মারধরের ঘটনাটি ঘটে গত বুধবার দুপুরে বড়াইগ্রাম উপজেলার কালিকাপুর গ্রামে। পরে তাঁকে পুলিশে তুলে দেন বিএনপির নেতা–কর্মীরা। এ ঘটনায় প্রকাশ্যে কেউ কথা না বললেও আড়ালে–আবডালে চলছে সমালোচনা।
উজ্জ্বল কুমার বনপাড়া পৌরসভার কালিকাপুর শ্মশানঘাট এলাকার সবজি ব্যবসায়ী বিশ্বনাথ মন্ডলের ছেলে। তিনি উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক আতিকুর রহমানের সঙ্গে চলাফেরা করতেন। গত ৫ আগস্টের পর থেকে তাঁরা আত্মগোপনে ছিলেন। অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে চিকিৎসক দেখানোর জন্য উজ্জ্বল বুধবার দুপুরে বাড়িতে ফেরেন। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে বিএনপির নেতা-কর্মীরা তাঁর ওপর হামলা করেন। গতকাল শুক্রবার আতিকুর রহমান নিজের ফেসবুকে ওই ভিডিও পোস্ট করেন।ভিডিওটি পোস্ট করে স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা আতিকুর রহমান ফেসবুকে লেখেন, ‘শুধু আওয়ামী লীগকে সমর্থন করায় বাড়িতে গিয়ে বৃদ্ধ পিতা-মাতাসহ সবাইকে বেধড়ক পিটিয়েছে বিএনপির চিহ্নিত সন্ত্রাসীরা।’ তিনি বিএনপি নেতা-কর্মীদের পরিচয় তুলে ধরে লেখেন, ‘এত কিছুর পরও তাঁকে পুলিশে তুলে দেওয়া হলো। তাদের পরিবারকে দুর্বৃত্তরা বারবার এলাকাছাড়ার হুমকি দিচ্ছে।’
২ মিনিট ৫৫ সেকেন্ডের ভিডিওতে দেখা যায়, বনপাড়া পৌর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক এ বি এম ইকবাল হোসেনের অনুসারী শ্রমিক দলের জালাল ভূঁইয়া, যুবদলের জাহাঙ্গীর আলম, শুভসহ সাত–আটজনের একটি দল লাঠিসোঁটা নিয়ে উজ্জ্বলের বাড়িতে এসে বেধড়ক পেটাতে থাকেন। উজ্জ্বলের বৃদ্ধ মা–বাবা তাঁকে উদ্ধারে এগিয়ে এলে তাঁদের ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেওয়া হয়। তাঁরা আবার এগিয়ে এলে তাঁদের মারধর করা হয়। অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী তাঁকে বাঁচাতে এগিয়ে এলে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেওয়া হয়। এ সময় তিনি হামলাকারীদের পা ধরে মারধর বন্ধ করার অনুরোধ করলেও তাঁরা শোনেননি। একপর্যায়ে উজ্জ্বল অসুস্থ হয়ে পড়লে তাঁকে বসিয়ে পানি খাওয়ানো হয়।
শেষে বিএনপির নেতারা পুলিশে খবর দিলে পুলিশ উজ্জ্বলকে উদ্ধার করে বড়াইগ্রাম উপজেলা হাসপাতালে ভর্তি করে। সেখান থেকে তাঁকে ফৌজদারি আইনের ১৫১ ধারায় আটক দেখিয়ে বৃহস্পতিবার সকালে নাটোরের বড়াইগ্রাম আমলি আদালতে পাঠায়। আদালত ওই দিনই তাঁর জামিন মঞ্জুর করেন।
এ ঘটনা নিয়ে ভুক্তভোগী ও তাঁর পরিবার এমনকি প্রতিবেশীরাও গণমাধ্যমের কাছে প্রতিক্রিয়া জানাতে চাননি। তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে এলাকার অনেকেই বলেন, ঘটনাটি নির্মম। এর বিচার হওয়া দরকার।
জানতে চাইলে বনপাড়া পৌর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক এ বি এম ইকবাল হোসেন বলেন, ‘আমি ভিডিওটি দেখেছি। এটা করা ঠিক হয়নি। আমরা অভিযুক্তদের ডেকে শাসিয়ে দিয়েছি। ভবিষ্যতে যেন এমন কাজ না করে।’
বড়াইগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সিরাজুল ইসলাম বলেন, খবর পেয়ে উজ্জ্বলকে উদ্ধার করে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়। পরে তাঁকে ১৫১ ধারায় আটক দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছিল। আদালত তাঁকে জামিন দিয়েছেন বলে শুনেছেন তিনি।