স্টাফ রিপোর্টার
নাটোরের বড়াইগ্রামে দশম শ্রেণীর এক স্কুল ছাত্রীকে ছয়জন মিলে পালাক্রমে ধর্ষণ ও ভিডিও ধারণ করার ঘটনায় ওসির বিরুদ্ধে মামলা না নেওয়ার বিষয়টি খতিয়ে দেখতে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করে রবিবার দুপুরে পুলিশ সুপার তারিকুল ইসলাম জানান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম এন্ড অপস) শরিফুল ইসলামকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির অন্যরা হলেন, বড়াইগ্রাম সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শরিফ আল রাজীব, ডিস্ট্রিক্ট ইনটেলিজেন্ট অফিসার (ডিআইওয়ান) জালাল উদ্দিন। তাদের দ্রুত সময়ের মধ্যেই তদন্ত প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
ঘটনার বিবরণে জানা যায়, গত ২৭ জানুয়ারি বিকেলে পূর্ব পরিচয়ের সুত্র ধরে নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলার দশম শ্রেণী পড়ুয়া স্কুলশিক্ষার্থীকে কৌশলে ডেকে নেয় পাশ্বকর্তী বড়াইগ্রামের আটঘরিয়া গ্রামের পারভেজ হোসেন। পথে নির্জন রাস্তায় পূর্ব পরিকল্পনা মাফিক পারভেজসহ আগে থেকেই অপেক্ষমান তার ৫ বন্ধু সাগর, মোহন, প্রসনজিৎ, জিত ও কৃষ্ণ মিলে স্কুলছাত্রীকে মুখ চেপে পেয়ারা বাগানে নিয়ে পালাক্রমে ধর্ষণ করে। পরে ধর্ষণের ভিডিও ছড়িয়ে দেয়াসহ কাউকে ঘটনাটি জানালে হত্যার হুমকি দিয়ে অভিযুক্তরা চলে যায়। পরবর্তীতে স্থানীয়রা মেয়েটিকে উদ্ধার করে বাড়িতে পৌঁছে দেয়। পরে গুরুতর অসুস্থ স্কুলছাত্রীটিকে সদর হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হয়।
এ ঘটনায় থানায় মামলা করতে গেলে বড়াইগ্রাম থানার ওসি শফিউল আজম খান মামলা না নিয়ে তাদের পাঠিয়ে দেন জোয়ারী ইউপি চেয়ারম্যান আলী আকবরের কাছে। ওসির কথামতো সেখানে কয়েক দফায় আপস মিমাংসার চেষ্টা করা হয়। এরই মধ্যে মিমাংসার আশ্বাস, ওসি ও প্রভাবশালীদের দৌরাত্মে দিশেহারা হয়ে পড়ে দরিদ্রতায় জর্জরিত নির্যাতিতার পরিবার। কেটে যায় আরও বেশ কিছুদিন। মামলা না নিয়ে আপস মিমাংসায় ওসির অপতৎপরতার কথা উঠে আসে নির্যাতিতার স্বজন ও জনপ্রতিনিধির কথায়। তবে নিজের প্রতি সকল অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ওসি।
ভুক্তভোগীর মেয়েটির বাবা কান্নাজড়িত কণ্ঠে জানান, থানায় গিয়ে তার মেয়ের উপর নির্মম নির্যাতনের কথা বলতেই ওসি বলে এটা কোনও বিষয় না। মামলা নেয়া যাবেনা। আপনারা চলে যান। এই কথায় চিন্তায় পড়ে যান তিনি। শেষে ওসির কথামতো চেয়ারম্যানের কাছে গেলাম। চেয়ারম্যানও কোনও সমাধান দিতে পারলো না। পরে কোর্টে গিয়ে মামলা করি।
ভুক্তভোগীর দুলাভাই জানান, থানায় মামলা করতে গেলে ওসি বলেন এটা কোনও বিষয়ই না। তারপর চেয়ারম্যানের কাছে যেতে বলে ধমক দিয়ে বের করে দেন ওসি।
জোয়ারী ইউপি চেয়ারম্যান আলী আকবর জানান, ওসি ফোনে তাকে দুইপক্ষকে নিয়ে বসে গণধর্ষণের বিষয়টি মিমাংসা করে দিতে বলেন। ওসির কথামতো তিনি বাদি বিবাদিকে নিয়ে কয়েক দফা বসেও বিষয়টি সামাধান করতে না পেরে ভুক্তভোগীর পরিবারকে আইনের আশ্রয় নিতে বলেন।
বড়াইগ্রাম থানার ওসি শফিউল আজম খান সকল অভিযোগ অস্বীকার করে জানান, গণধর্ষণের ঘটনায় কেউ থানায় মামলা করতে আসেনি। বার বার ভুক্তভোগীদের সাথে যোগাযোগ করেও মামলা করাতে পারেনি পুলিশ। চেয়ারম্যানকে দিয়ে আপস মিমাংসার কথাও অস্বীকার করেন তিনি।
এ ঘটনায় এলাকায় গিয়ে অভিযুক্তদের কাউকেই পাওয়া যায়নি। গণমাধ্যম কর্মীদের উপস্থিতি টের পেয়ে গা ঢাকা দেন তাদের স্বজনরাও। দোষীদের দৃষ্টান্তমুলক শাস্তি দাবী করছেন স্থানীয়রা।
নাটোরের পুলিশ সুপার তারিকুল ইসলাম জানান, গণধর্ষণের ঘটনায় মামলা না নেয়াসহ পুলিশের কারও কোনও গাফিলতি থাকলে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
অবশেষে কোথাও বিচার না পেয়ে গত ২২ ফেব্রুয়ারি আদালতের স্মরণাপন্ন হন ভুক্তভোগীরা। আদালত বিষয়টি আমলে নিয়ে পিবিআইকে তদন্ত করতে নির্দেশনা প্রদান করেছেন। এ ব্যাপারে পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার শরীফ উদ্দিন জানান, আদালতের নির্দেশনার কপি হাতে পেয়েছেন। ইতিমধ্যে তদন্ত কার্যক্রম শুরু হয়েছে।