স্বামীর নির্মম নির্যাতন ও শরীরে দেওয়া আগুনে পুড়ে মারা গেলেন স্ত্রী

  • বুধবার, ২০ ডিসেম্বর, ২০২৩
স্বামীর নির্মম নির্যাতন ও শরীরে দেওয়া আগুনে পুড়ে মারা গেলেন স্ত্রী #সংবাদ শৈলী

নাটোর প্রতিনিধি.

শরীরজুড়ে সিগারেটের ছ্যাঁকা। চাকু দিয়ে হাত পায়ের বিভিন্ন অংশে কেটে ফালাফালা করা। পরে শরীরে কেরোসিন ঢেলে আগুন দেওয়া। এমন বর্বর নির্যাতনের পর স্বামীর দেওয়া আগুনে দগ্ধ হয়ে পাঁচদিন অসহ্য যন্ত্রণা সয়ে অবশেষে মারা গেছেন গৃহবধু রেবেকা সুলতানা (৩৯)।
স্থানীয়রা দগ্ধ রেবেকাকে শুক্রবার রাতে প্রথমে গুরুদাসপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়ার পর রাতেই রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়। তার অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় শরীরের ৯০ শতাংশ দগ্ধ অবস্থায় রেবেকাকে রবিবার শেখ হাসিনা বার্ণ ইউনিটে ভর্তি করা হয়। বুধবার সকাল সাড়ে আটটার দিকে চিকিৎসক তাকে মৃত্যু ঘোষণা করেন।
শুক্রবার স্বামীর দেওয়া আগুনে দগ্ধ হলেও রবিবার রেবেকাকে চিকিৎসার জন্য ঢাকা পাঠানোর পর স্বামী মেহেদী হাসান (৩৫), দেবর তানজিল (৩০) ও শ^াশুরী মেহেরজানকে (৫৫) অভিযুক্ত করে গুরুদাসপুর থানায় হত্যাচেষ্টার মামলা দায়ের করেন রেবেকার মা লালবি বেগম। স্বামীর দেওয়া আগুনে রেবেকা পুড়ে মারা গেলে পুলিশ এখন পর্যন্ত আসামীদের গ্রেপ্তার করতে পারেনি।
রেবেকা গুরুদাসপুর পৌর সদরের চাঁচকৈড় বাজারপাড়া মহল্লার নবির সরদারের মেয়ে। সেখানেই মায়ের সাথে থাকতেন তিনি। স্বামী মেহেদী হাসান গুরুদাসপুর উপজেলার ধারাবারিষা ইউনিয়নের চলনালী কান্দিপাড়া গ্রামের জয়নাল হোসেনের ছেলে।
আসামিরা গা ঢাকা দেওয়ায় তাদের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশের উপ-পরিদর্শক আবুল কালাম আজাদ বলেন, আইনি প্রক্রিয়া মেনে নিহত রেবেকার লাশ আনার প্রস্তুতি চলছে। আসামিদের গ্রেপ্তারের জন্য তারা অভিযান চালাচ্ছেন।
খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, বছর খানেক আগে আদালতের মাধ্যমে মেহেদী হাসানের সাথে রেবেকার বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকে মাঝে মধ্যে বিভিন্ন বিষয়ে তাদের মধ্যে কলহ হতো। কোনো পেশা না থাকায় রেবেকার টাকাতেই সংসার চলতো। সম্প্রতি টাকার জন্য রেবেকাকে ব্যাপক চাপ দিচ্ছিলেন মেহেদী। এজন্য শারীরিক নির্যতানও সইতে হয়েছে তাকে।
রেবেকার মা মামলার বাদি লালবি বেগম অভিযোগ করেন, যৌতুকছাড়াও বিভিন্ন বিষয় নিয়ে রেবেকাকে অমানুষিক নির্যাতন করছিলেন জামাই মেহেদী। এসব ঘটনায় মেহেদীর বিরুদ্ধে আদালতে দুটি মামলাও করেছেন রেবেকা। এরপর থেকে রেবেকাকে তার কাছেই রেখেছেন। মামলাটি প্রত্যাহার করতে সম্প্রতি তাদের পরিবারের ওপর ব্যাপক চাপ দিচ্ছিলেন মেহেদী।
রবিবার বার্ণ ইউনিটে নেওয়ার আগে দগ্ধ রেবেকা সুলতানা জানান, তার আগের পক্ষের দুই বছর বয়সি সন্তানকে আটকে রেখেছিলেন স্বামী মেহেদী। সন্তানকে হত্যার হুমকি দিয়ে শুক্রবার রাতে মেহেদী তাকে বাড়িতে ডাকেন। সন্তানের কথা বিবেচনা করে তিনি মেহেদীর বাড়িতে যান। সেখানে যাওয়া মাত্রই স্বামী মেহেদী, দেবর তানজিল ও শাশুড়ি মেহেরজান তার হাত-পা বেঁধে ফেলেন। এরপর মেহেদী প্রথমে সারা শরীরে সিগারেটের ছ্যাঁকা দেন। চাকু দিয়ে হাত পায়ের বিভিন্ন অংশ কেটে দেন। একপর্যায়ে কেরোসিন ঢেলে তার শরীরে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। এসময় তার চিৎকারে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেন। তখন তিনি নির্যাতনের বিষয়টি থানায় জানিয়েছিলেন।
গুরুদাসপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরী বিভাগের চিকিৎসক বলেন, দগ্ধ অবস্থায় রেবেকাকে হাসপাতালে আনা হয়েছিল। রেবেকার শরীরের অধিকাংশ জায়গা পুড়ে যায়। একারণে রেবেকাকে রাজশাহী মেডিকেলে পাঠানো হয়েছিল।
গুরুদাসপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. উজ্জল হোসেন জানান, চিকিৎসার জন্য রেবেকাকে থানার পক্ষ থেকে সহায়তা করা হয়েছে। আসামি ধরতে পুলিশ সক্রিয় রয়েছে।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
COPYRIGHT 2023 sangbadshoily, ALL RIGHT RESERVED
Site Customized By NewsTech.Com