সংবাদ শৈলী ডেস্ক
গাজা থেকে রকেট হামলার পর ইসরায়েলে এ পর্যন্ত ১০০ জন নিহত এবং ৯০৮ জন আহত হয়েছে। অন্যদিকে গাজায় ইসরায়েলি হামলায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ১৯৮-তে দাঁড়িয়েছে। সেই সঙ্গে অনেক ইসরায়েলিকে জিম্মি করে হামাস গাজায় নিয়ে গেছে বলেও খবর পাওয়া গেছে।
ইসরায়েলি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, দক্ষিণ ও মধ্য ইসরায়েলে হামাসের চলমান হামলায় এ পর্যন্ত ৯০৮ জন আহত ব্যক্তিকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
নজিরবিহীন এ হামলায় অন্তত ১০০ জন নিহত হয়েছে বলেও কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। অন্যদিকে গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বিমান হামলায় নিহত ফিলিস্তিনিদের সংখ্যা বেড়ে ১৯৮ জনে দাঁড়িয়েছে বলে সেখানকার স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
এ ছাড়া আর্মি রেডিওর খবরে বলা হয়েছে, ইসরায়েলি সেনারা গাজা উপত্যকার সীমান্তের নিকটবর্তী দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর নিরিমে হামাসের ৯ যোদ্ধাকে হত্যা করেছে। ইসরায়েল প্রতিরক্ষা বাহিনী শনিবার ভোর থেকে ইসরায়েলি ভূখণ্ডে ফিলিস্তিনি বন্দুকধারীদের সঙ্গে লড়াই করছে।
এদিকে হামাসের রাজনৈতিক ব্যুরোর উপপ্রধান সালেহ আল-আরোরি দাবি করেছেন, ইসরায়েলের সেনাবাহিনীর ‘ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের’ আটক করা হয়েছে। তিনি আল জাজিরার আরবি চ্যানেলকে বলেছেন, ‘আমাদের হাতে যা আছে তা ইসরায়েলের সব বন্দিকে মুক্ত করবে।’ এটি ইসরায়েলি কারাগারে ফিলিস্তিনি বন্দিদের মুক্ত করার একটি স্পষ্ট উল্লেখ। হামাস ৫৩ জনকে বন্দি করার দাবি করেছে।
তিনি আরো বলেন, ‘আমরা দখলদার সেনাবাহিনীর সিনিয়র অফিসারদের ধরে নিয়েছি। এখানে অনেক ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে এবং অনেক ইসরায়েলি মারা গেছে। সেই সঙ্গে বন্দিও হয়েছে। যুদ্ধ এখনো চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে।’
ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর শীর্ষ মুখপাত্র রিয়ার অ্যাডমিরাল ড্যানিয়েল হাগারি নিশ্চিত করেছেন, হামাস ইসরায়েলিদের গাজা উপত্যকায় জিম্মি হিসেবে নিয়ে গেছে।
সাংবাদিকদের সঙ্গে এক ব্রিফিংয়ে হাগারি বলেন, যুদ্ধে ইসরায়েলি সেনারাও নিহত হয়েছেন। তবে জিম্মি বা নিহত সেনার সংখ্যা সম্পর্কে কোনো তথ্য দেওয়া হয়নি।
যুদ্ধে ইসরায়েল
হামাস হামলা শুরুর পর ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, তার দেশ ‘যুদ্ধের মধ্যে রয়েছে’। ফিলিস্তিনের সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের দিক থেকে আকস্মিক আক্রমণ শুরুর পর ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী এ বক্তব্য দিয়েছেন।
ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের বেশ কিছু অস্ত্রধারী দক্ষিণ ইসরায়েলে ঢুকে পড়েছে। ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকা থেকে ইসরায়েলে হাজার হাজার রকেট নিক্ষেপের পর এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। নেতানিয়াহু বলেন, ‘আমরা যুদ্ধের মধ্যে আছি, এটা কোনো অভিযান নয়, কোনো উত্তেজনা নয়, এটা যুদ্ধ।’
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর একজন মুখপাত্র জানিয়েছেন, ফিলিস্তিন প্রায় আড়াই হাজার রকেট ছুড়েছে ইসরায়েলে। এ ছাড়া সমুদ্র, স্থলপথ ও প্যারাগ্লাইড করে অস্ত্রধারীরা ইসরায়েলে ঢুকে পড়েছে।
রকেট হামলার জবাবে ইসরায়েল হামাসের বিভিন্ন স্থাপনা লক্ষ্য করে বিমান হামলা চালিয়েছে। ইসরায়েলের দাবি, তারা হামাসের ১৭টি সেনা কম্পাউন্ডে হামলা করেছে। ইসরায়েল ডিফেন্স ফোর্স আইডিএফ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্সে জানিয়েছে, তারা এখন পর্যন্ত ১৭টি সেনা কম্পাউন্ড আর হামাসের অপারেশনের চারটি হেডকোয়ার্টারে হামলা করেছে। তবে এই দাবির সত্যতা যাচাই করা সম্ভব হয়নি।
হামাস নেতা মোহাম্মদ দেইফ বলেছেন, ‘আমরা বলতে চাই, যথেষ্ট হয়েছে।’
অন্যদিকে ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস বলেছেন, দখলদার সেনা ও বসতি স্থাপনকারীরা যে আতঙ্ক তৈরি করেছে, সেখান থেকে ফিলিস্তিনের জনগণের অধিকার রয়েছে নিজেদের রক্ষা করার।
রকেট হামলার পর ইসরায়েল হাজার হাজার সংরক্ষিত সেনাকে তলব করেছে। ইসরায়েলের গণমাধ্যম বলছে, দক্ষিণ ইসরায়েলের বিভিন্ন জায়গায় ফিলিস্তিনি বন্দুকধারীদের লড়াই চলছে।
হামাস দাবি করেছে, তারা অন্তত ৩৫ জন ইসরায়েলিকে বন্দি করেছে। কিন্তু বিষয়টি নিয়ে ইসরায়েলের সামরিক মুখপাত্র কোনো মন্তব্য করেননি।
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেছেন, তাদের ওপর আক্রমণ করে হামাস ‘অনেক বড়’ ভুল করেছে। ‘প্রতিটি জায়গায় ইসরায়েলি সেনারা তাদের শত্রুদের বিরুদ্ধে লড়াই করছে। ইসরায়েল রাষ্ট্র এতে জয়ী হবে।’
গাজা উপত্যকা থেকে এক আকস্মিক হামলা চালানোর পর ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের কয়েক ডজন বন্দুকধারী দক্ষিণ ইসরায়েলে ঢুকে এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, ফিলিস্তিনি অস্ত্রধারীরা ইসরায়েলের শহর সদেরতের রাস্তায় পথচারীকে লক্ষ্য করে গুলিবর্ষণ করছে।
অনলাইনে আরেক ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, সদেরতের রাস্তায় একদল সশস্ত্র ফিলিস্তিনি নিজেদের কালো পোশাকে ঢেকে পিকআপে করে যাচ্ছে। এ ছাড়া তাদের ইসরায়েলি সেনাদের সঙ্গেও গোলাগুলি করতে দেখা যায়। গাজা থেকে এই শহরের দূরত্ব মাত্র এক মাইল।
ইসরায়েল ডিফেন্স ফোর্স (আইডিএফ) জানিয়েছে, তারা এখন যুদ্ধাবস্থায় রয়েছে এবং কয়েক ডজন যুদ্ধবিমান গাজায় হামাসের অবস্থান লক্ষ্য করে আকাশপথে হামলা চালাতে যাচ্ছে।
ইহুদিদের বিশেষ ধর্মীয় অনুষ্ঠান সুকত শেষ হওয়ার পরপরই শনিবার ভোর থেকে হামাস নিয়ন্ত্রিত গাজা অঞ্চল থেকে রকেট হামলা শুরু হয়। হামাস গণমাধ্যমে এক সিনিয়র সেনা কমান্ডার ইসরায়েলের বিরুদ্ধে এই অপারেশন শুরুর ঘোষণা দেন, তিনি প্রত্যেক ফিলিস্তিনিকে সব জায়গা থেকে যুদ্ধে নামার আহ্বান জানান।
সূত্র : বিবিসি, টাইমস অব ইসরায়েল