স্টাফ রিপোর্টার
সক্রিয় মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে নাটোরে জেলাজুড়ে গত বুধবার থেকে বৃহস্পতিবার সারাদিন পর্যন্ত টানা ভারী বৃষ্টিপাতে নাটোর পৌরসভায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। পৌরসভার অপক্ষোকৃত নিচু এলাকায় পান্দিবন্দী হয়ে পড়েছে পৌরবাসী। পৌরসভার নয়নজলি খ্যাত খাল ভরাট ও বেদখল হয়ে যাওয়া এবং ত্রæটিপূর্ণ ড্রেনেজ ব্যবস্থার কারণে এই সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া ভারী বর্ষণে জেলার বেশিরভাগ মাঠের ফসল এখন পানির নিচে।
খোজ নিয়ে জানা গেছে, নাটোর জেলায় গড়ে ৯৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। এর মধ্যে নাটোর সদরে ১২০ মিলি মিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে তারা। গত এক বছরে এটি একদিনের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাতের রেকর্ড। এতে নাটোর পৌরসভাসহ জেলাজুড়েই বেশিরভাগ এলাকার মাঠঘাট এখন পানির নিচে। তবে নতুন করে বৃষ্টিপাত না হওয়ায় নাটোর শহরের আবাসিক ও নিন্মাঞ্চল ছাড়া বানিজ্যিক এলাকা থেকে পানি সরে গেছে। তবে শুক্রবার পর্যন্ত নাটোর পৌরসভার কয়েকটি ওয়ার্ডে পানিবন্দী রয়েছে পৌরবাসী। বিশেষ করে পৌর এলাকার কাঠালবাড়ীয়া কালুর মোড়, উত্তর চৌকিরপাড়, দক্ষিণ চৌকির পাড়, উত্তর পটুয়াপাড়া, দক্ষিণ পটুয়া পাড়া, বলারী পাড়া, হাজরা নাটোর, আলাইপুর, নাটোর বালক সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়, ফৌজদারিপাড়া, পালপাড়া, বড়াগাছা, আদালত চত্ত¡র, জেলা প্রশাসন চত্ত¡রসহ বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দা এখনও পানিবন্দী অবস্থায় রয়েছেন।
এদিকে ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে ফসলের ব্যপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছে কৃষি বিভাগ। তবে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে শুক্রবার সারাদিন নাটোর জেলায় নতুন করে বৃষ্টিপাত হয়নি। ফলে পানি কমতে শুরু করার সাথে সাথে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণও বাড়তে থাকে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসের তথ্যমতে, জেলার সিংড়া ও নলডাঙ্গা উপজেলার অন্তত ১৬ হেক্টর রোপা আমন ধান ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। সম্পন্ন তলিয়ে গেছে ৪২২ হেক্টর জমির ধান। এছাড়া নাটোর সদর উপজেলার প্রায় সকল ইউনিয়নের সবজী ক্ষেত ভারী বৃষ্টিপাতে তুলয়ে যাওয়ায় ব্যপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করছেন কৃষকরা। কিছু কিছু জমি থেকে পানি কমে গেলেও কৃষকদের খুব একটা লাভ হবে না।
এদিকে নাটোর পৌরসভার জলাবদ্ধ এলাকায় পানি নিষ্কাষণে কাজ করছে পৌরসভা কর্তৃপক্ষ। এক্সেভেটর মেশিন ও পৌরসভার লোকজন দিয়ে পানি নিষ্কাষণের চেষ্টা চালাচ্ছে পৌরসভা। পৌর এলাকার পানি নিষ্কাষণের একমাত্র নয়নজলি খালটি নানা ভাবে বেদখল ও ভরাট হয়ে যাওয়া ও পৌরসভার ত্রæটি পূর্ণ ড্রেনেজে ব্যবস্থার কারণেই এই অভস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে জানান ভুক্তভোগী পৌরবাসী।
নাটোর পৌরসভার ১ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মলয় কুমার রায় জানান, দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে পৌরসভার নয়নজলি খ্যাত খালটি নানাভাবে ভরাট ও দখল হয়ে যাওয়ায় পৌরসভার পানি নিষ্কাষণ বিঘিœত হচ্ছে। ফলে গতকাল থেকে এলাকার বাসিন্দাদের বাড়িঘরে হাটু সমান পানি বেঁধে গেছে। বাড়ী ঘর থেকে পানি কমছে না। সাময়িকভাবে পানি নিষ্কাষণের জন্যে ভেকু ও লোকজন দিয়ে পানি নিষ্কাষণের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। কিন্তু এটি স্থায়ী সমাধান নয়। স্থায়ী সমাধানে জেলা প্রশাসন ও পৌরসভার যৌথ আলোচনা সাপেক্ষে ভরাট হওয়া নয়নজলি খাল উদ্ধারে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।
এ ব্যাপারে নাটোর পৌরসভার সহকারি প্রকৌশলী রেজাউল ইসলাম জানান, দীর্ঘদিন ধরে খাল ও ড্রেন বিভিন্নভাবে বেদখল হয়ে যাওয়া, বাড়ী ঘর নির্মাণ, ময়লা আবর্জনা জমে যাওয়ার কারণে পানি প্রবাহ বাধাগ্রস্থ হচ্ছে। সমস্যা সমাধানে আমাদের লোকজন কাজ করছে। আশা করা হচ্ছে, দু-একদিনের মধ্যে পৌরসভার জলাবদ্ধতার সমাধান হবে।
নাটোর কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক আব্দুল ওয়াদুদ জানান, জেলায় গড়ে ৯৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। এর মধ্যে নাটোর সদরে ১২০ মিলি মিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে তারা। নতুন করে বৃষ্টিপাত না হলে ফসলের ক্ষতি অনেক কমিয়ে আনা যাবে।