স্টাফ রিপোর্টার
আওয়ামী লীগের একপক্ষের ভয়ে একমাস ধরে ঘরবাড়ি ছাড়া আছেন চার গ্রামের আওয়ামী লীগের অপরপক্ষের প্রায় শতাধিক কর্মী-সমর্থক। ঘরবাড়ি ছাড়া এসব নেতা-কর্মীরা আশ্রয় নিয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল মতিনের অফিসে ও বাড়িতে।
সংকট নিরসনে গতকাল বুধবার বিকালে এসব এলাকা পরিদর্শন করার কথা ছিল নাটোরের পুলিশ সুপার তারিকুল ইসলামের। আবহাওয়া প্রতিকুল থাকায় পুলিশ সুপার বিবাদপূর্ণ এলাকায় যেতে পারেননি।
সবশেষ গতকাল বুধবার বিকেলে আওয়ামী লীগের এক পক্ষের হাতে আবারো হামলার শিকার হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন খাকড়াদহ সীমান্ত বাজার এলাকার আব্দুস সামাদ নামের একজন। তবে হামলার পর পরই পুলিশকে বিবাদপূর্ণ এলাকায় টহল দিতে দেখা গেছে।
বুধবার রাত আটটার দিকে উপজেলার নয়াবাজারস্থ গুরুদাসপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের অস্থায়ী কার্যালয়ে ঘরবাড়ি ছাড়া হওয়া অন্তত ৫০ ব্যক্তির সাথে কথা হয়। তারা জানান, ২ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হওয়া এই হামলায় তাদের অন্তত ২০টি বাড়িতে ভাংচুর শেষে লুটপাট চালানো হয়েছে। আহত হয়েছেন ২২ জন। চারটি গ্রামের আওয়ামী লীগের প্রায় শতাধিক কর্মী-সমর্থক বাড়ি ছাড়া হয়ে আছেন। এসব এলাকায় মাঝে মাঝে নারীদের ওপর হামলা চালাচ্ছেন আওয়ামী লীগের অপরপক্ষ।
তালবাড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা আব্দুর রাজ্জাক (৭০) জানান, তারা সাবেক এমপি আব্দুল কুদ্দুস এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মতিনের সমর্থক। ৩০ আগস্ট আব্দুল কুদ্দুস মারা যাওয়ার পর থেকে তাদের ওপর হামলা মারধর শুরু করেন ধারাবারিষা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক রিপন সরকার, হাবিব মন্ডল ও আমানত হাজির লোকজন । সেই থেকে তারা বাড়িছাড়া হয়ে আছেন।
তবে ধারাবারিষা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক রিপন সরকার ও হাবিব মÐল অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, মূলত তারাই রাজনৈতিকভাবে চাপে রয়েছেন।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মতিন জানান, ৩০ আগস্ট আব্দুল কুদ্দুস এমপি মারা যাওয়ার পর ২ সেপ্টেম্বর থেকে ধারাবারিষা মোল্লাপাড়া, ফকিরপাড়া, দাদুয়া ও তালবাড়িয়া গ্রামে ধারাবাহিকভাবে এসব সহিংসতার ঘটনা ঘটছে। এসব গ্রামের প্রায় শতাধিক কর্মী-সমর্থকরা ঘরবাড়ি থেকে দলের অস্থায়ী কার্যালয়ে আশ্রয় নিয়েছেন। নির্যাতনের শিকার ওই ব্যক্তিদের সুষ্ঠুভাবে বাড়ি ফিরিয়ে দিতে তিনি প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, মূলত নাটোর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি স্থানীয় সংসদ সদস্য আব্দুল কুদ্দুসের মৃত্যুর পর থেকেই আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের এক পক্ষ নৃশংসতা শুরু করে। বিশেষ করে উপনির্বাচনের জন্য বড়াইগ্রামের উপজেলা চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা ডা. সিদ্দিকুর রহমান পাটোয়ারী দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার পর থেকে এসব হামলা ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ড ঘটছে।
রিপন সরকার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যে গুজব রটানো হচ্ছে। উল্টো প্রতিপক্ষ আব্দুল মতিন চেয়ারম্যানের লোকজনই তাদের হুমকি দিচ্ছে।
গুরুদাসপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. মোনোয়ারুজ্জামান বলেন, থানায় বিবাদমান দুই গ্রæপের চারটি মামলা রয়েছে। সবাই জামিনে আছেন। তবে বুধবারের হামলার ঘটনায় অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।