কান্নারত সুদানে নিহত মাসুদ রানার স্ত্রী আখি। ছবি-সংবাদ শৈলীকান্নারত সুদানে নিহত মাসুদ রানার স্ত্রী আখি। ছবি-সংবাদ শৈলী

স্টাফ রিপোর্টার
সুদানের আবেই এলাকায় সন্ত্রাসীদের হামলায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদস্য নাটোরের লালপুর উপজেলার বোয়ালিয়াপাড়া গ্রামের মৃত সাহার মালিথার ছেলে শহীদ কর্পোরাল মাসুদ রানা বাড়িতে চলছে এখন শোকের মাতম। এই নির্মম ঘটনা জেনে শোকার্ত পুরো গ্রামবাসী। এখন তাদের একটিই দাবি নিহত কর্পোরাল মাসুদ রানার লাশ দ্রুততম দেশে ফিরিয়ে পরিবারের কাছে গহস্তান্তর করা সহ দরিদ্র এই পরিবারটি পুনর্বাসনে সরকারের প্রয়োজনীয় সহযোগিতা প্রদানের।
সরজমিনে রবিবার দুপুরে শহীদ মাসুদ রানার বোয়ালিয়া পাড়া গ্রামের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, পলেস্করা ছোড়া ইট ও টিনের ছাউনির দুটি ঘরে মাসুদ রানা ও তার রিবারের সদস্যদের বসবাস। মাসুদ রানার মা বারান্দায় মাদুর পেতে চোখ বুজে শুয়ে রয়েছেন । তাকে শান্তনা দিচ্ছেন প্রতিবেশী ও স্বজনরা। সন্তান হারোর বেদনা ও নাবালক নাতনী ও পুত্র বধুর অনিশ্চিত ভবিষ্যতের চিন্তায় বার বার মূর্ছা যাচ্ছেন তিনি। কান্না জড়িত দুর্বল কন্ঠে তিনি জানান , মাত্র একমাস ৭দিন হলো শান্তি মিশনে গিয়েছিলেন মাসুদ রানা। আগে বেতন কম ছিল। তাই আয় উন্নতি কিছু করতে পারেনি। আশা ছিল শান্তি মিশনে গিয়ে কছিু টাকা পয়না পেলে তাদের ভাগ্য ফিরবে। এখনতো তিনি তার মৃত ছেলেকে চোখের দেখাও দেখতে পারছেন না। মর্জিনা খাতুন ডুকরে কেঁদে উঠে বলেন, তার বড় ছেলে মাসুদ রানা। জীবনে অনেক কষ্ট করেছে। বাবার মাত্র ১বিঘা ২ কাঠা জমি ছাড়া কিছু নেই। এখন কি হবে নাবালক নতনী ও তার পুত্র বধুর। তিনি বলেন গতকাল দুপুরে ভিডিও কলে ছেলের সঙ্গে কথা হয়েছে। ডিউটির কষ্টের কথা জানতে চাইলে সে বলল, মা এখন আর কষ্ট নাই, ডিউটি কম। আমাকে ভালো থাকতে বলে ছেলে নিজেই চলে গেল।
মাসুদ রানার স্ত্রী আসমাউল হুসনা আঁখিও স্বামীর মৃত্যুর সংবাদে শোকে স্তব্ধ হয়ে পড়েছেন। কথা বলতে গিয়ে বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন। তিনি একবার স্বামীর মুখ দেখতে চান বলেই আবারাে মুর্ছা যান।

শহীদ কর্পোরাল সামসুদ রানার চাচা নাহার উদ্দিস বলেন, তিন ভাইয়ের মধ্যে মাসুদ রানা ছিলেন সবার বড়। মাসুদ রানা ২০০৬ সালে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। তার মেজো ভাই মনিরুল ইসলাম ২০১২ সালে এবং ছোট ভাই রনি আলম ২০১৮ সালে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। সর্বশেষ শান্তিরক্ষা মিশনে যাওয়ার আগে মাসুদ রানা যশোর ক্যান্টনমেন্টে কর্মরত ছিলেন।
শনিবার (১৩ ডিসেম্বর) তার মৃত্যুর খবর প্রথম জানতে পারেন তার ছোট ভাই সেনাসদস্য রনি আলম। পরে তিনি বিষয়টি পরিবারের অন্য সদস্যদের জানান। খবরটি ছড়িয়ে পড়তেই পুরো গ্রামজুড়ে নেমে আসে শোকের ছায়া। বাড়িতে স্বজনদের কান্না আর আহাজারিতে ভারি হয়ে উঠেছে পরিবেশ।মাসুদ রানার মৃত্যুর খবরে বোয়ালিয়াপাড়া ও আশপাশের গ্রাম স্তব্ধ হয়ে গেছে।
প্রতিবেশী আষার আলী ,বাহার উদ্দিন বলেন শান্ত ও মিশুক স্বভাবের মানুষ ছিলেন মাসুদ রানা। চাকরি পাওয়ার আগে পরিবারের আর্থিক অবস্থা বেশ খারাপ ছিল। তবে তিন ভাই চাকরি পাওয়ার পর পরিবারে কিছুটা স্বস্তি ফেরে। পরিবারের সুখের স্বপ্ন নিয়েই পারি জমান শান্তিরক্ষী মিশনে। তারা শহীদ মাসুদ রানার লাশ দেশে ফিরিয়ে এনে পরিবারের কাছে হস্তান্তরের দাবি সহ এই দরিদ্র পরিবারটির সহযোগিাতা প্রদানের জন্য সরকারের কাছে দাবি জানান।
শহীদ মাসুদ রানার ছোট ভাই রনি আলম বলেন, ভাই হারোনোর শোক ভাষায় প্রকাশ করার মতো না। দেশের জন্য আমার ভাই শহীদ হয়েছেন। এই আত্মত্যাগে আমরা গর্বিত।
লালপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. জুলহাস হোসেন সৌরভ বলেন, উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে শহীদ পরিবারের পাশে থাকার সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
উল্লেখ্য গত ১৩ ডিসেম্বর সুদানের আবেই এলাকায় শান্তি রক্ষী মিশনে সন্ত্রাসী হামলায় কর্পোরাল মাসুদ রানা সহ ৬ সেনা সদস্য নিহত এবং ৮হন আহত হন। #

By admin

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *