স্টাফ রিপোর্টার
আসন্ন পবিত্র ঈদুল আযহা তথা কুরবানিকে ঘিরে নাটোরের সিংড়া উপজেলায় ৯২ হাজার পশু প্রস্তুত করেছেন খামারিরা। উপজেলার চাহিদা মিটিয়ে পাঠানো যাবে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন হাটে। উপজেলার পৌরসভা ও ১২ ইউনিয়নের প্রায় ৫০০০ হাজার খামারীরা এসব পশু পালন করছেন। এতে প্রায় ২০০ কোটি টাকার কেনা-বেচার সম্ভাবনা রয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছে, উপজেলায় কুরবানির জন্য ৪৫ হাজার ৫৫০টি পশুর চাহিদা রয়েছে। পশু প্রস্তুত রয়েছে ৯২ হাজার ৫৬৬টি। বাড়তি পশু দেশের অন্যত্র সরবরাহ করা হবে। দাম ভালো পেলে লাভবান হবেন খামারিরা।
প্রতিবছর কুরবানির ঈদকে সামনে রেখে সিংড়া উপজেলার খামারিরা গরু, ছাগল, ভেড়া ও মহিষ মোটাতাজাকরণে ব্যস্ত থাকেন। তারই ধারাবাহিকতায় এ বছরও কুরবানিকে সামনে রেখে দেশী গরু ও ছাগল মোটাতাজা করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন উপজেলার খামারিরা। বিগত বছরগুলোর মতো এবারও গবাদিপশু লালনপালনকারীরা ভালো দামের প্রত্যাশায় রয়েছেন। এদিকে কুরবানির পশু নিরাপদ করতে গরু মোটা তাজাকরণে ক্ষতিকর ওষুধ ব্যবহার বন্ধে খামারিদের পরামর্শ ও খামার তদারকি করছে প্রাণীসম্পদ অধিদপ্তর।
সিংড়া উপজেলায় স্থায়ী ও অস্থায়ী হাটে গবাদিপশু বেচা-কেনা হয়। এসব বাজারে বিভিন্ন স্থান থেকে বেপারিরা এসে গরু ক্রয় করে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় নিয়ে বিক্রি করে। এছাড়া স্থানীয় বেপারিরা এলাকায় কৃষকের বাড়ি বাড়ি গিয়ে গরু ক্রয় করে তা বিভিন্ন বাজারে বিক্রি কওে থাকেন। বর্তমানে এ উপজেলার প্রায় ১০ হাজার মানুষ (খামারি, কৃষক ও বেপারিরা) এ পেশায় রয়েছে।
খামারি ছাড়াও উপজেলার সাধারণ কৃষকরা বাড়তি আয়ের জন্য বাড়িতে দু’য়েকটি করে গরু মোটাতাজা করে। ঈদের সময় আকার ভেদে বিভিন্ন দামে পশু বিক্রি করে থাকেন এখানকার খামারি ও কৃষকরা।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরের তথ্য মতে, এ উপজেলায় ছোট-বড় মিলে প্রায় ৫০০০ খামার রয়েছে। এসব খামারে এবার ১২ হাজার ৪২২টি ষাঁড়, ২ হাজার ২১৫টি বলদ, ১ হাজার ৪০১টি গাভী, ২০৭টি মহিষ, ৬৯ হাজার ৯৫৭টি ছাগল ও ৬ হাজার ৩৬৪টি ভেড়া হৃষ্টপুষ্ট করা হয়েছে। গত বছরের তুলনায় পশুর সংখ্যা বেড়েছে। উপজেলার খামারগুলোতে শাহীওয়াল, ফ্রিজিয়ান ও দেশী গরু মোটাতাজা করা হয়।
সরেজমিনে উপজেলার বিভিন্ন খামারে গিয়ে কথা হয় খামারী ও কৃষকদের সাথে। এবারও কুরবানির গরু প্রস্তুত রয়েছে উপজেলার তেমুখ নয়দাপাড়া গ্রামের অর্ক ডেইরি ফার্মে। এ ফার্মে প্রায় ৭০/৮০টি গরু কুরাবানির জন্য মোটাতাজা করেছেন।
এ ফার্মের পরিচালক জাহিদ হাসান বলেন, আমরা দেশীয় পদ্ধতিতে গরু লালনপালন করে থাকি। গম ও ভূট্টা ভাঙ্গা, খড়, ভূষি ও নিয়ম মাফিক নেফিয়ার ঘাস খাওয়ানো হয়। আমাদের গরুগুলোকে প্রাণঘাতী স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ খাওয়ানো হয় না। সারা বছর এই প্রতিষ্ঠানে গরু বিক্রি করা হয়। উপজেলা প্রাণীসম্পদ দপ্তর আমাদের সবসময় পরামর্শ ও সহযোগিতা করে থাকে।
পৌরসভার উত্তর দমদমা এলাকার খামারী মোছাঃ ফাতেমা বেগম বলেন, আমি ২২ বছর যাবৎ গরু লালনপালন করি। সম্পূর্ণ দেশীয় পদ্ধতিতে গম ও ভূট্টা ভাঙ্গা, ভূষি খাইয়ে থাকি। কোনো মোটা তাজাকরণ ওষুধ বা ইঞ্জেকশন ব্যবহার করিনা। খামারে ৩৫টি গরু প্রস্তুত করেছি। আশা করছি লাভবান হবো।
উপজেলার বেশ কয়েকজন খামারির সাথে কথা হলে তারা জানান, ঈদ উল আযহা উপলক্ষে ভালো দামের আশায় তারা পশু লালন-পালন করছেন। খরচ বেশি হলেও ভালো দাম পাওয়া নিয়ে আশা করছেন খামারিরা। অন্যদিকে ভারতীয় গরু দেশে প্রবেশ যেন না করতে পারে সে দাবি জানিয়েছেন তারা।
পৌরসভার চকসিংড়া মহল্লার খামারি নাজেহাল শাহ্ বলেন, আমার খামারে ৪টি গরু রয়েছে। ১বছর আগে এসব গরু কিনেছিলাম। ভালো দাম পাবার আশায় পরিচর্চা করে যাচ্ছি। গো-খাদ্যের দাম কিছুটা বেশি। ভারতীয় পশু দেশে না ঢুকতে দিলে, ভালো দাম পাবো বলে আশা করছি। ভারতীয় পশু যেন দেশে না ঢুকতে পারে সেজন্য প্রশাসনের কঠোর নজরদারির দাবি করছি।
পৌরসভার দমদমা এলাকার খামারি বাবুল হাসান বকুল বলেন, ঈদ উপলক্ষে ১০টি ছাগল প্রস্তুত করেছি। যেকোনো পরামর্শ ও সহযোগিতার জন্য প্রাণীসম্পদ অধিদপ্তরকে পাশে পেয়েছি। খাদ্য খরচ বেশি, তবুও ন্যায্য দাম পেলে লাভবান হতে পারবো বলে আশা করছি।
সিংড়া উপজেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা ডা: কে এম ইফতেখারুল ইসলাম বলেন, এ উপজেলায় খামারিরা কুরবানির পশু প্রস্তুত করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। পশুগুলোকে মোটাতাজা করার জন্য কোনো ধরনের ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ বা ওষুধ খাওয়ানো হচ্ছে না। সেদিকে আমাদের নজরদারি রয়েছে। সবুজ ঘাস, ভূষি, খৈল, চালের গুড়া, ছোলা, গম ও ভূট্টা ভাঙ্গা খাওয়াচ্ছেন। পশুকে নিরাপদ ও সুস্থ রাখতে আমরা খামারিদের পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি। প্রাণীসম্পদ অফিস থেকে আগ্রহী ব্যক্তিদের প্রশিক্ষণ, প্রণোদনা ও প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করা হয়েছে।