সাইবার নিরাপত্তা আইনে সর্ব্বোচ্চ শাস্তি ৭ বছরের জেল,২৫ লাখ টাকা জরিমানা

  • সোমবার, ৭ আগস্ট, ২০২৩
 সাইবার নিরাপত্তা আইনে সর্ব্বোচ্চ শাস্তি ৭ বছরের জেল,২৫ লাখ টাকা জরিমানা#সংবাদ শৈলী

সংবাদ শৈলী রিপোর্ট

বিতর্কিত ২০১৮ সালের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের নাম পরিবর্তন করে সরকার ‘সাইবার নিরাপত্তা আইন, ২০২৩ এর খসড়া আইন  নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।সোমবার (৭ আগস্ট) প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে মন্ত্রিসভা বৈঠকে এ অনুমোদন দেওয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন।

বৈঠক শেষে দুপুরে সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে সাইবার নিরাপত্তা আইন নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক। এরপর বিকেলে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন বৈঠকের বিষয়ে ব্রিফিং করেন।

২০১৮ সালে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন প্রণয়ন করে সরকার। এরপর এ আইনের অপব্যবহার হচ্ছে অভিযোগ করে বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে থেকে আইনটি বাতিলের দাবি ওঠে। আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সংশোধন করা হচ্ছে বলে এর আগে জানিয়েছিলেন আইনমন্ত্রী ।

আইনমন্ত্রী বলেন, ‘আইনটিকে ভেটিংয়ের জন্য আইন মন্ত্রণালয়ের লেজিসলেটিভ বিভাগে পাঠানো হয়েছে। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক মন্ত্রিসভায় নতুন আইনটি উত্থাপন করেন।’আইনমন্ত্রী বলেন, ‘আমি পরিষ্কার করে বলতে চাই, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল করা হয়নি, পরিবর্তন করা হয়েছে।

তিনি বলেন, ‘ডিজিটাল প্রগ্রেস (অগ্রগতি) সঠিকভাবে মূল্যায়ন করতে আইনটির নাম দেওয়া হয়েছে সাইবার নিরাপত্তা আইন। এ আইনের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দিক হচ্ছে, সাইবার নিরাপত্তার জন্য যেসব ধারাগুলো ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ছিল, সেগুলো এখানে অক্ষুণ্ন রাখা হয়েছে। সেগুলোর কোনো পরিবর্তন করা হয়নি।’

দ্বিতীয়ত, যেটা করা হয়েছে- ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অনেকগুলো ধারা, যেমন মানহানির যে ধারাটা ছিল, সেই ধারায় আগে শাস্তি ছিল কারাদণ্ড। সেই কারাদণ্ডের জায়গায় এখন জরিমানার বিধান করা হয়েছে। অর্থাৎ মানহানির একমাত্র সাজা জরিমানা। এখন জরিমানা যদি না দেওয়া হয়, তাহলে কারাদণ্ড থাকবে। সেটাও জরিমানার ওপর ভিত্তি করে তিন মাস বা ছয় মাসের কারাদণ্ড থাকবে। কিন্তু মূল শাস্তি হচ্ছে জরিমানা। জরিমানা আগে সর্বোচ্চ ছিল ৫ লাখ টাকা, এখন তা বাড়িয়ে ২৫ লাখ টাকা করা হয়েছে বলেন আইনমন্ত্রী।এছাড়া‘এখানে অনেকগুলো ধারা যেগুলো আগে অজামিনযোগ্য ছিল, সেগুলোকে (সাইবার সিকিউরিটি আইন) জামিনযোগ্য করা হয়েছে।’

আইনমন্ত্রী বলেন, ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ধারা ২১-এ বাংলাদেশের ভাবমূর্তি, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, বঙ্গবন্ধু, বাংলাদেশের পতাকা ও জাতীয় সংগীত- এসব নিয়ে যদি কেউ কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করে, তাহলে সেটাকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়েছিল। সেটির সাজা ছিল ১০ বছর কারাদণ্ড, সেটিকে কমিয়ে এখন সাত বছর করা হয়েছে।’নতুন আইনে দ্বিতীয়বার অপরাধ করলেও প্রথমবারের অপরাধে যে সাজা থাকবে, দ্বিতীয়বারের জন্যও একই সাজা থাকবে।’

‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে অনেক জায়গায় সাজার পরিমাণ অনেক বেশি ছিল, সেটি কমানো হয়েছে। যেখানে উপধারা দিয়ে কিংবা দ্বিতীয়বার করলে সাজা দ্বিগুণ হয়ে যেত, সেই সব ধারা সম্পূর্ণ বিলুপ্ত করা হয়েছে। যে কারণে ডিজিটাল নিরাপত্তা না, সাইবার নিরাপত্তা আইন নামেই এটি পরিবর্তন হবে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের রহিতকরণ ও হেফাজতকরণের প্রভিশন রেখে আমরা সাইবার নিরাপত্তা নিরাপত্তা আইন করেছি।’

তিনি বলেন, ‘যেগুলো ট্যাকনিক্যাল ওফেন্স সেখানে কিন্তু আমরা জামিনযোগ্যও করিনি। সাজাও কমানো হয়নি। ৩০ ধারা (আইনানুগ কর্তৃত্ববহির্ভূত ই-ট্রানজেকশন এর অপরাধ ও দণ্ড) থাকবে। সরকারি গোপনীয়তা ভঙ্গের অপরাধে আগে ১৪ বছরের জেল ছিল, এখন তা ৭ বছর করা হয়েছে।’

‘পরোয়ানা ছাড়া তল্লাশি, জব্দ ও গ্রেফতারের যে ধারাটি ছিল, সেটি কি পরিবর্তন হয়েছে? জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ডিজিটাল অপরাধের ক্ষেত্রে অনেক সময় যে যন্ত্র দিয়ে সেটি করা হয়েছে, তাৎক্ষণিকভাবে সেগুলো জব্দ না করা হয়, তাহলে সাক্ষ্যপ্রমাণ হারিয়ে যাওয়ার একটি শঙ্কা থাকে। সে কারণে আমার মনে হয়, ৪৩ নম্বর ধারাটি থাকার প্রয়োজন। এ আইনে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ৪৩ নম্বর ধারা (পরোয়ানা ব্যতিরেকে তল্লাশি, জব্দ ও গ্রেফতার) ছিল, সেটি আছে।’

তাহলে ৪৩ ধারা অনুযায়ী মামলা হলেই যে পুলিশ পরোয়ানা ছাড়াই গ্রেফতার করে সে বিষয়ে কোনো পরিবর্তন আনা হয়েছে কি না- জানতে চাইলে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘সবচেয়ে বড় কথা হলো, এখন কোনো কারাদণ্ড নেই। তাহলে কেন গ্রেফতার করা হবে। গ্রেফতারের কোনো আশঙ্কাই থাকলো না। এখন আর গ্রেফতার হবে না।’

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলাগুলো চলবে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘মামলার যে কার্যক্রম সেটি সাইবার নিরাপত্তা আইনে চলবে। আগামী সেপ্টেম্বরে জাতীয় সংসদ অধিবেশনে আইনটি উঠবে, সেখানে এটি পাস করা হবে।’

তিনি বলেন, ‘সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে ব্যাখ্যায় (খসড়া আইন) এখন কোনো কারাদণ্ড নেই। তো আপনাদের অ্যারেস্ট করবে কেন? অ্যারেস্ট তো করার আর কোনো আশঙ্কাই থাকলো না।’

নতুন আইন সাইবার ক্রাইম বন্ধে অত্যন্ত সহায়ক হবে জানিয়ে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘আপনারা যেসব সমস্যা নিয়ে ব্লেইম করছিলেন, সেই অপব্যবহারটাও বন্ধ হবে।’

মন্ত্রিপরিষদ সচিব মাহবুব হোসেন বলেন, , ‘সাজার ক্ষেত্রে বিদ্যমান আইনে জেলের ওপরে ফোকাসটা বেশি ছিল। এখানে এসে জেলের সাজার পরিমাণটা কমানো হয়েছে কিন্তু আবার আর্থিক জরিমানার অংশ রাখা হয়েছে, কিছু কিছু ক্ষেত্রে আর্থিক জরিমানা বৃদ্ধি করা হয়েছে।’

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ৩৩ ধারা (বে-আইনিভাবে তথ্য-উপাত্ত ধারণ, স্থানান্তর, ইত্যাদির দণ্ড) ও ৫৭ ধারা (সরল বিশ্বাসে কৃত কাজকর্ম) নতুন আইনে বাতিল করা হয়েছে বলেও জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
COPYRIGHT 2023 sangbadshoily, ALL RIGHT RESERVED
Site Customized By NewsTech.Com