স্টাফ রিপোর্টার
নির্বাচনোত্তর সহিংসতায় নাটোরের বাগাতিপাড়া ও লালপুর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় বাড়ি ও দোকানে হামলা, ভাংচুর ও টাকা লুটের ঘটনা ঘটেছে। সোমবার সকাল পর্যন্ত এসব বাড়িঘর ও দোকানে হামলা করা হয়েছে। এসব বাড়িঘর ও দোকানপাট সদ্য সাবেক সংসদ সদস্য শহিদুল ইসলাম বকুলের অনুসারীদের। নবনির্বাচিত সংসদ সদস্য আবুল কালাম আজাদের অনুসারী ও স্থানীয় বিএনপির কিছু নেতাকর্মী এ সহিংসতায় অংশ নিয়েছে বলে ভুক্তভোগীদের অভিযোগ। ঘটনার পর থেকে পরাজিত নৌকার প্রার্থী সাবেক সংসদ সদস্য শহিদুল ইসলাম বকুলের অনুসারীরা আতœগোপনে আছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রোববার রাত ৯টায় ভোটের ফলাফল ঘোষণার পর স্বতন্ত্র প্রার্থী আবুল কালাম আজাদ নির্বাচিত হবার পর তার কর্মী হিসেবে পরিচিত দয়ারামপুর ইউনিয়নের চানপুর এলাকায় ইউপি সদস্য আক্কাস আলীর নেতৃত্বে তার ছেলে সবুজ, আওয়ামী লীগ কর্মী জাহিদুল, লিটন, শাহজালাল, কালুসহ ৮/৯ জন উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক উপ-পাঠচক্র সম্পাদক জাকারিয়া হোসেনের বাড়িতে হামলা চালায়। এসময় তার বাড়িতে ছিলেন মা আলেয়া বেগম ও দুই ভাই। এসময় তারা হাসুয়ার কোপে বাড়ির টিনের দেয়াল কেটে ঘরে ঢুকে ঘরের আসবাব ও টেলিভিশন ভাংচুর করে। বাগাতিপাড়া পৌরসভার টুনিপাড়া এলাকায় রুবেলের বাড়িতে প্রথমে স্থানীয় বিএনপি কর্মীরা ও পরে স্বতন্ত্র প্রার্থী আবুল কালামের সমর্থকরা হামলা চালায়। এসময় বাড়িতে থাকা এক লাখ ৬০ হাজার টাকা ও দুটি স্বর্ণের চেইন নিয়ে যায় বিএনপির কর্মীরা। এছাড়া রোববার রাতেই ভাংচুর করা হয়েছে দয়ারামপুর ইউনিয়নের সোনাপুর বাজারের মিস্টারের মুদি দোকান ও চাস্টল, বাগাতিপাড়া পৌর ১ নং আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বেলাল হাজি, আওয়ামী লীগ কর্মী কাচু ও তুষারের বাড়ি। কর্মীদের উপর হামলার এমন একাধিক ঘটনা লালপুর ও বাগাতিপাড়া উপজেলার বিভিন্ন স্থানে ঘটছে বলে অভিযোগ করেন সাবেক সংসদ সদস্য শহিদুল ইসলাম বকুল।
ভুক্তভোগী জাকারিয়া জানান, হামলার পরে আমাকে যেখানে পাওয়া যাবে সেখানেই মেরে ফেলা হবে বলে আমার মা কে শাসিয়েছে মেম্বারের লোকজন।
হামলার শিকার রুবেল জানান, রাত থেকে আমার বাসায় আমাকে কয়েক দফা খুঁজতে এসেছে বিএনপি ও নির্বাচিত এমপির লোকেরা। বাসার নারীদের বলে গেছে আমি বাসায় এলে পরিণতি খারাপ হবে।
বকুলের কর্মী নাসির উদ্দিন জানান, ফজরের নামাজশেষে সোনা পুর বাজারে চা খেতে গেলে আমার বাবার উপর হামলা চালিয়েছে কালামের লোকজন। পরে তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।
বাগাতিপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নুরুল ইসলাম ঠান্ডু জানান, আওয়ামী লীগের কর্মীদের বাড়িঘর ভাংচুর করা হয়েছে। আমাদের কর্মীরা বাড়ি ঘরে থাকতে পারছে না। দ্রæত ব্যবস্থা না নিলে পরিস্থিতি আরো খারাপ হবে।
নৌকার পরাজিত প্রার্থী শহিদুল ইসলাম বকুল জানান, ফলাফল ঘোষনার পর থেকেই আমার অন্তত ৩০ জন নেতাকর্মীদের বাড়ী ঘরে ভাংচুর ও লুটপাট করা হয়েছে। কর্মী সমর্থকের উপর হামলা চালিয়ে আহত করা হচ্ছে। তারা হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছে। রবিবার রাত থেকে দুই উপজেলার বিভিন্ন স্থানে এমন হামলা চালিয়েছে কালামের গুন্ডা বাহিনী। এসব ঘটনায় জড়িতদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানান তিনি।
নব-নির্বাচিত সংসদ সদস্য আবুল কালামের মুঠোফোনে কল দিয়ে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
বাগাতিপাড়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নান্নু খান জানান, আওয়ামী লীগের কিছু কর্মীর বাড়িতে হামলার করা হয়েছে। মৌখিকভাবে অভিযোগের পর পুলিশ পাঠানো হয়েছে। সকাল থেকেই পুলিশের টহল বাড়ানো হয়েছে।
পুলিশ সুপার তারিকুল ইসলাম জানান, আমরা হামলার বিষয়টি শুনেছি। দুইটি উপজেলায় আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্য মাঠে রয়েছেন। টহল জোরদার করা হয়েছে। বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে। তবে বিক্ষিপ্ত এসব ঘটনায় এখনও অভিযোগ দায়ের হয়নি। অভিযোগ পেয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।