বিয়ের দেন মহর ৫টি চারা গাছ !

  • মঙ্গলবার, ২৪ অক্টোবর, ২০২৩
বিয়ের দেন মহর ৫টি চারা গাছ !#সংবাদ শৈলী
সুকৃতি নাবিনের বিয়েতে দেন মহর হিসেবে রোপন করছেন ৫ফলদ ও বনজ চারা গাছ। সংবাদ শৈলী

স্টাফ রিপোর্টার
নগদ অর্থ বা গহনা নয়, দেনমোহর হিসেবে পরিবেশের উপকারি বন্ধু গাছ নিয়ে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছেন নাটোরের কনে সুকৃতি আদিত্য। এমন ব্যতিক্রমী দেনমোহরের কারণে আলোচিত হয়েছেন তিনি। সুকৃতি-নাবিন দম্পতি বিয়ের দিন গাছ লাগিয়ে বলেছেন, দেনমোহর নিয়ে যে অসুস্থ প্রতিযোগিতা চলছে তা দুর করে ভালবাসাটাকে প্রাধান্য দিতেই গাছ নিয়ে তাদের এমন আয়োজন। ব্যতিক্রমি এই আয়োজনে চাঞ্চল্য তৈরী হয়েছে পুরো এলাকা জুড়ে।
গেল শুক্রবার নাটোর শহরের সদরের দিঘাপতিয়ায় ঐতিহাসিক উত্তরা গণভবনের পাশে গিয়ে দেখা গেল, একটি বিয়ে বাড়িতে আনন্দ, উচ্ছ¡াস, হৈ, হুল্লোর চলছিল। এরই মাঝেই কনে সুকৃতি আদিত্য ও বর নাবিন আদনান গাছের চারা রোপন করে তা পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন। পূর্ব পরিচয় থাকলেও দুই পরিবারের সম্মতিতে ঘরোয়া পরিবেশেই বিয়ে সম্পন্ন হয় সুকৃতি-নাবিনের। আর বিয়ের অন্যতম আকর্ষন ছিল দেনমোহর হিসাবে পরিবেশবান্ধব গাছ। দেনমোহর হিসাবে আপাতত বরের কাছ থেকে ৫টি ফলদ ও বনজ গাছ নেন কনে সুকৃতি। এমন ব্যতিক্রম বিয়েতে প্রশংসায় ভাসছেন সুকৃতি ও নাবিন দম্পতি।
কনে সুকৃতি ও তার বাবা মায়ের গাছ এবং পরিবেশের প্রতি রয়েছে অগাধ ভালোবাসা। সেই ভালোবাসা থেকে তিনজনের পরিকল্পনা অনুযায়ী সুকৃতি তার বিয়ের মোহরানা হিসেবে বেছে নেন গাছ। পারিবারিকভাবে ধুমধাম করেই তাদের বিয়ে হয়। বিয়ের আসরেই মোহরানা হিসেবে ৫টি ফলদ ও বনজ গাছ হস্তান্তর করেন বরপক্ষ। টাকার অংকের হিসাবে না মিলিয়ে সুকৃতির এমন চিন্তা চেতনায় আনন্দিত সবাই।
কনে সুকৃতি আদিত্য বলেন, বর্তমানে অনেক বিয়েতে দেনমোহর নিয়ে যে অসুস্থ প্রতিযোগিতাটা চলছে। আমার মনে হয় তা থেকে বেড়িয়ে আসা উচিত। কারণ বিয়ে মানেই আর্থিক লেনদেনটা মুখ্য না। দু’টি মানুষের মনের মিল হওয়াটাই বড় ব্যাপার। সেখান থেকে মনে হলো যে যদি এমন কিছু করা যায় যা আমাদের প্রকৃতিকেও সুস্থ রাখবে। সেই সাথে আমাদের সম্পর্কটাও সুস্থ রাখবে। তাই নতুন জীবন শুরু করার পূর্বে আমার মনে হয়েছে, গাছ একটা দারুণ উপকরণ হতে পারে, যেটার মাধ্যমে পরিবেশটাও সুস্থ থাকলো, আমরাও খুশি থাকলাম পরিবেশের সুস্থতা দেখে।
বর নাবিন আদনান জানান, দেনমোহরের বিষয়বস্তুটা হচ্ছে নিরাপত্তা। আমার কাছে মনে হয় যে আমাদের নিরাপত্তার চাইতে পরিবেশের নিরাপত্তা বেশী জরুরী। এটা একটা প্রতীকী ব্যাপার। এর বাইরে বিশেষ কিছু নয়। প্রতীকী ব্যাপার হিসাবেই আমরা চর্চা করলাম যাতে আমরা পরিবেশ, প্রকৃতির সাথে মিলেমিশে থাকতে পারি। সুকৃতির ভিন্ন চিন্তাকে স্যালুট জানাই।
কনের বাবা বিশিষ্ঠ চারু ও কারু শিল্পী, নাট্য নির্দেশক ,সাংস্কৃতিক কর্মি এম. আসলাম লিটন জানান, তার মেয়ে সুকৃতি আদিত্য সিন্ধান্ত নিয়েছিল যে, বিয়েতে সে মোহরানা নেবে না। নিলেও সে একটা টোকেন নিতে চায়। অভিভাবক হিসাবে তারা সুকৃতির সেই সিন্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন। তার মেয়ে মনে করে মোহরানা নিয়ে টাকার অংক বাড়িয়ে একটা অসুস্থ প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। সেই প্রতিযোগিতায় সুকৃতি থাকবে না। সমাজকে সে একটা বার্তা দিতে চায় যে, মোহরানাটা মুল নয়। মুলটা হচ্ছে দু’টি মানুষের বন্ধন। দু’টি মানুষের হৃদয় মন এক হয় বিয়ের মধ্য দিয়ে। এই বন্ধনটাই আসল। কোন অর্থনৈতিক বা সম্পদের জায়গায় গিয়ে চুক্তিবন্ধ হওয়ার চাইতে আত্মার চুক্তিবন্ধ হওয়া বেশী জরুরী। সেই জায়গাটা সুকৃতি অনুভব করেছে। বাবা হিসাবে তিনি গর্বিত যে তার মেয়ে এমন ব্যতিক্রম একটা সিন্ধান্ত নিয়েছে।
এ ঘটনায় প্রথমে বরযাত্রী, আত্মীয়-স্বজন ও পাড়া-প্রতিবেশী রীতিমতো অবাক হয়ে গেলেও পরে সকলেই প্রসংশায় ভাসিয়েছেন নব দম্পতিকে। জীবনের প্রথম এমন বিয়ে দেখে রীতিমতো হতবাক তারা।
স্থানীয় বাসিন্দা গুলজান বেগম জানান, তিনি তার জীবনে এমন ব্যতিক্রম বিয়ে দেখেননি। বিয়ে বাড়িতে এসে বর কনের গাছ লাগানো দেখে তার খুবই ভাল লেগেছে। নতুন দম্পতি সুখে শান্তিতে থাকুক এমন শুভকামনা জানান তিনি।
সৈয়দ মাসুম রেজা নামে এক সাংস্কৃতিকর্মী বলেন, দেনমোহরে সবসময় কনেদের বা কনেপক্ষকে টাকার অংক বাড়াতে দেখেছি। কিন্তু সুকৃতির বিয়েতে ব্যতিক্রম দেখলাম। তার চিন্তা চেনতা অবশ্যই সাধুবাদ প্রাপ্য।
নাটোরের বাসিন্দা লিটন-সুস্মিতা দম্পতির একমাত্র কন্যা সুকৃতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের প্রাচ্যকলা বিভাগ থেকে মাস্টার্স এবং কুমিল্লার বাসিন্দা নাবিন একই অনুষদের অংকন ও চিত্রায়ণ বিভাগ থেকে মাস্টার্স সম্পন্ন করেছেন। নাবিন এখন ঢাকায় শিল্প নির্দেশক হিসাবে কাজ করছেন। বছর ছয়েক আগে তারা পূর্ব পরিচয় থেকে ভালবাসার বন্ধনে জড়ান। পরে দু’পারিবারের সম্মতি নিয়েই সুকৃতি-নাবিন পরস্পর বিয়ের পিঁড়িতে বসেন।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
COPYRIGHT 2023 sangbadshoily, ALL RIGHT RESERVED
Site Customized By NewsTech.Com