স্টাফ রিপোর্টার
নাটোরের বড়াইগ্রামে ১৪টি প্যাকেটে মোড়ানো প্রতিটিতে ২ কেজি করে মোট ২৮ কেজি গাঁজা গুনে গুনে উদ্ধার করা হলেও থানায় তা ৭ কেজি দেখিয়ে জব্দ করা হয়েছে। এ ঘটনায় স্থানীয় সাংবাদিকরা ব্যাপক অনুসন্ধান চালালে ও প্রকৃত ঘটনা তুলে ধরার জন্য তৎপর হয়ে উঠলে তা উর্ধতন পুলিশ কর্মকর্তাদের নজরে আসে। বুধবার দুপুরে বড়াইগ্রাম-লালপুর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শোভন চন্দ্র হোড় গাঁজা উদ্ধারের ঘটনা রহস্যাবৃত উল্লেখ করে উদ্ধারকারী কর্মকর্তা বনপাড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের উপ-পরিদর্শক (এসআই) আব্দুর রাজ্জাককে পুলিশ লাইনে প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে বলে জানান। এর আগে মঙ্গলবার মধ্য রাত দেড়টার দিকে উপজেলার মাঝগাঁও ইউনিয়নের ছাতিয়ানগাছা মোল্লাপাড়া মোড় থেকে কালো মোটা পলিবস্তায় রাখা ১ বস্তা গাঁজা সহ কাভার্ড ভ্যান আটক করে পুলিশ। রাতেই জনসম্মূখে পলিবস্তাটি খোলা হলে সেখান থেকে গাঁজা ভর্তি স্বচ্ছ পলিথিনের ১৪টি প্যাকেট গুনে গুনে পুলিশ জব্দ করে। সকালে নিউজ সংগ্রহ করতে গিয়ে থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) গোলাম সারোয়ার হোসেনকে মুঠোফোনে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি সাংবাদিকদের জানান, ৭ কেজি গাঁজা সহ কাভার্ড ভ্যান আটক ও চালককে গ্রেফতার করা হয়েছে। পক্ষান্তরে প্রকৃত ঘটনা তুলে ধরে বাকী গাঁজা কোথায় সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানান, উদ্ধারকৃত কর্মকর্তা এসআই আব্দুর রাজ্জাক ১৪ টি পলিথিনের প্যাকেটে (প্রতিটিতে ৫০০ গ্রাম) মোট ৭ কেজি গাঁজা উদ্ধার করে থানায় জমা দিয়েছেন। তবে সাংবাদিকদের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্য অিনুসন্ধান চালিয়ে উদ্ধারকৃত গাঁজা ও জব্দ দেখানো গাঁজার পরিমাণে গড়মিল খুঁজে পান পুলিশের উর্ধতন কর্মকর্তারা এবং এ প্রেক্ষাপটে উদ্ধারকৃত কর্মকর্তা এসআই আব্দুর রাজ্জাককে পুলিশ লাইনে ক্লোজড্ করা হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শী স্থানীয় বাসিন্দা আসাদুল ইসলাম জানান, রাত সাড়ে বারোটার দিকে ছাতিয়ানগাছা মোল্লাপাড়া মোড়ে একটি নীল রঙের কাভার্ডভ্যান (ঢাকা মেট্রো-ন-২৩-৩৬৯৬) থেকে দুজন লোক একটি বড় পলিবস্তা নামাচ্ছিলেন। দেখতে পেয়ে এলাকাবাসী চোর সন্দেহে ধাওয়া দিলে তারা বস্তা ফেলে পালিয়ে যায়। তবে কাভার্ডভ্যানসহ চালককে আটক করে গ্রামবাসী। পরে পুলিশকে খবর দিলে বনপাড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের এসআই আব্দুর রাজ্জাক ফোর্সসহ ঘটনাস্থলে গিয়ে ২৮ কেজি গাঁজা ও বহনকারী কাভার্ডভ্যান জব্দ করে এবং চালককে আটক করে।
ছাতিয়ানগাছা গ্রামের নজরুল ইসলাম ও মুস্তাক হোসেন জানান, আমরা নিজেরাই গুনে ১৪টি পলিথিনের ব্যাগ ভর্তি গাঁজা পুলিশকে বুঝিয়ে দেই। প্রতিটি পলিথিনের ব্যাগ দুই কেজির কম হবেই না। এক্ষেত্রে ১৪টির মোট ওজন হবে কমপক্ষে ২৮ কেজি। তবে অন্যান্য প্রত্যক্ষদর্শী জানায়, দুই হাত দিয়ে বস্তা তুলে পরিমাপ করেছি, সেখানে কোন ভাবেই ৩০ কেজির কম হবে না। অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমরা দাঁড়িপাল্লা এনে মাপতে চাইলে ওই উপ-পরিদর্শক মাপতে দেননি। এখন শুনছি, সেখানে মাত্র ৭ কেজি গাঁজা জব্দ দেখানো হয়েছে। আমরা এ ঘটনায় খুবই বিস্মিত হয়েছি।
উদ্ধার করা গাঁজার পরিমাণ নিয়ে এলাকাবাসীর অভিযোগের ব্যাপারে ওই দিনই এসআই আব্দুর রাজ্জাকের মোবাইল ফোনে স্থানীয় সাংবাদিকরা একাধিকবার কল দিলে তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
বড়াইগ্রাম থানার অফিসার ইনচার্জ গোলাম সারোয়ার হোসেন জানান, এ ব্যাপারে চালকসহ ৩ জনকে আসামী করে থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। তারা হলেন চালক লালমনিরহাটের সিংগাদার গ্রামের রশিদ মন্ডলের ছেলে সায়েম মন্ডল (৩৪), মাদক ব্যবসায়ী নাটোরের বড়াইগ্রামের ছাতিয়ানগাছা গ্রামের পিয়ার আলীর ছেলে আশরাফ আলী (৪৫) ও লালপুরের গোধরা গ্রামের কৈয়রা প্রামাণিকের ছেলে ফয়েজুল্লাহ প্রামাণিক (৪৮)। চালককে গ্রেফতার দেখিয়ে নাটোর জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে এবং অপর দুই আসামী পলাতক রয়েছে।
