স্টাফ রিপোর্টার
বড় মেয়ের নাম বুশরা, বয়স ১১। দ্বিতীয় ও ছোট ছেলে আনাস ও ইয়াস। তাদের দু’জনের বয়স ৮ ও ৫ বছর। বেলা তখন দুপুর সাড়ে ১২টা (সোমবার)। অপেক্ষায় তারা, কখন আসবে মা-বাবা। মেয়ে বুশরা মা-বাবা জীবিত আসবে না বুঝলেও ছোট দুই ভাই জানে কক্সবাজার থেকে তাদের জন্য অনেক কিছু নিয়ে আসবে মা-বাবা। বাড়ির কোনে রাখা দুইটি স্টিলের খাটিয়া দেখে আতœীয়-স্বজনেরা কান্নায় ভেঙ্গে পড়ছে। ইতোমধ্যে স্থানীয় কবরাস্থানে পাশাপাশি দুইটি কবর খোঁড়া হয়েছে। সেখানেই চিরকালের জন্য শুইয়ে রাখা হবে তাদের মা-বাবাকে।
নাটোরের বড়াইগ্রামের বনপাড়া পৌর শহরের দিয়ারপাড়া এলাকার প্রকৌশলী আবুল কাশেম বকুল (৪২) ও সাবিকুন নাহার সুমা (৩৪) রবিবার দুপুর ১২টার দিকে কক্সবাজারের সমুদ্রে ডুবে মারা গেছেন। বকুল দিয়ারপাড়া এলাকার মৃত বোরহানউদ্দিন আহমেদ এর ছেলে ও সুমা দিনাজপুর চিরিরবন্দরের সুলতান আলীর একমাত্র মেয়ে।
মৃত বকুলের বড় ভাই আবু তাহের জানান, তার ভাই আবুল কাশেম বকুল একটি বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন এবং স্বপরিবারে ঢাকার ডেমরা স্টাফ কোয়ার্টার এলাকায় থাকতেন। অফিসিয়াল ট্যুর হিসেবে স্ত্রীকে নিয়ে শনিবার কক্সবাজারে বেড়াতে যান বকুল। তাদের তিন সন্তানকে নানীর কাছে রেখে যান তারা। তিনি ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার জোনের উপ-পরিদর্শক চাঁন মিয়ার বরাত দিয়ে আরও জানান, রবিবার সকালে সমুদ্র সৈকতে গিয়ে গোসলে নামেন তারা। সেখানে ঢেউয়ের সাথে স্ত্রী সুমাকে ডুবে যেতে দেখে বকুল বাঁচানোর জন্য ঝাঁপিয়ে পড়ে। পরে তাদেরকে আর খুঁজে পাওয়া যায়নি। পরবর্তীতে সী-সেইফ লাইফ গার্ড এর কর্মীরা তাদের দু’জনের মৃতদেহ উদ্ধার করে।
সরজমিনে দেখা যায় বকুল দম্পতির মৃত্যুর খবর বাড়িতে পৌছিলে শোকে মুহ্যমান হয়ে পড়ে পুরো পরিবার ।
ছেলে ও পুত্রবধূর মৃত্যুর খবরে বকুলের সদ্য বিধবা মাসহ স্বজনরা যেন শোকে পাথর হয়ে গেছেন। বাবা-মায়ের মেজো ছেলে অত্যন্ত মেধাবী বকুলের এমন মৃত্যু তারা কেউই মেনে নিতে পারছেন না। স্বামী-স্ত্রীর এক সঙ্গে এমন মৃত্যুতে শোকেস্তব্ধ পুরো পরিবার।বকুলের বিধবা মা ক্ষণে ক্ষণে মুর্ছা যাচ্ছেন আর বলছেন কোথায় আমার বুকের মানিক। তোরা ওকে আমার কাছে নিয়ে আয়। তাকে শান্তনা দিতে গিয়ে স্জন ও প্রতিবেশীরাও কান্নায় ভেঙ্গে পড়ছেন।
মৃত বকুলের বড় ভাই আবুল হাশেম জানান, কক্সবাজার থেকে বকুল ও তার স্ত্রীর মৃতদেহ দুপুওে দিয়ারপাড়া মহল্লার বাড়িতে আনা হয়। এরপর বাদ জোহর প্রথম দফা জানাযা শেষে তাদেও গ্রামের বাড়ি বড়াইগ্রাম উপজেলার কৈডিমা গ্রামে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে বাদ আসর দ্বিতীয় দফা জানাযা শেষে গ্রামের কবর স্থানে স্বামী-স্ত্রীর মৃতদেহ দাফন করা হয়।
অরদিকে মৃত্যুর খবর পেয়ে আবুল কাশেমের বাড়িতে গিয়ে সমবেদনা ও শান্তনা দেন বড়াইগ্রাম পৌর মেয়র কেএম জাকির হোসেন
বনপাড়া পৌর মেয়র কেএম জাকির হোসেন জানান, নিহতরা সম্পর্কে তার খালাতো ভাই ও ভাই বউ। তাদের এই অকাল মৃত্যু বড়ই বেদনাদায়ক। তাদের এতিম তিন সন্তানের ভবিষ্যত নিশ্চিত করতে পৌর মেয়র হিসেবে ও পাশাপাশি তাদের চাচা হিসেবে সবসময় পাশে থাকবেন বলে তিনি জানান।