নাটোর-৪ আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রতিদ্বন্ধি আওয়ামীলীগ

  • রবিবার, ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২৩
নাটোর-৪ আসনের উপনির্বাচনেআ.লীগের মনোনয়ন কিনেছেন  ১৭ জন#সংবাদ শৈলী

স্টাফ রিপোর্টার
নাটোর-৪ আসনের উপনির্বাচন নিয়ে আওয়ামীলীগ ছাড়া শরীক বা বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের তেমন মাতামাতি নেই। এই নির্বাচনে অংশ নিতে শুধু ক্ষমতাসীন দলেরই আট নেতা দলীয় প্রতীক নৌকার কান্ডারি হতে দলীয় হাইকমান্ডে জোর লবিং তৎপরতা চালাচ্ছেন। বিএনপি ও জামাতের নেতাকর্মীরা কেন্দ্রিয় নির্দেশনা না থাকায় এ নির্বাচনে তারা যাচ্ছে না বলে উপজেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল আজিজ নিশ্চিত করেছেন।

নাটোর-৪ আসনের হেভিওয়েট নেতা আব্দুল কুদ্দুসের মৃত্যুতে আসনটি শূণ্য হওয়ায় এখানে উপনির্বাচন আয়োজন করা হচ্ছে। নির্বাচন কমিশনের তফসিল মতেÑ নাটোর-৪ (গুরুদাসপুর-বড়াইগ্রাম) আসনের ভোট গ্রহণ হবে ১১ অক্টোবর। ১৭ সেপ্টেম্বর মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন। ১৮ সেপ্টেম্বর মনোনয়নপত্র বাছাই। মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের বিরুদ্ধে আপিল দায়ের ১৯ থেকে ২১ সেপ্টেম্বর। আপিল নিষ্পত্তি ২৩ সেপ্টেম্বর। ২৪ সেপ্টেম্বর প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ তারিখ। প্রার্থীদের প্রতীক বরাদ্দ ২৫ সেপ্টেম্বর।
ভোটারদের মতে, আওয়ামী লীগের নেতারা মনোনয়ন পেতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন। ঢাকঢোল পিটিয়ে এই দলের কোনো নেতাই এখন পর্যন্ত ভোটারদের দ্বারে পৌঁছাননি। তবুও পরিস্থিতি বলছে- এসব নেতারা মাঠ সরগরম না করলেও নির্বাচন নিয়ে বেশ সক্রিয় ভূমিকায় আছেন। এই নির্বাচনে অহেতুক অংশ নিতে চায়না বিএনপি। তবে নাটোর জেলা জাতীয়পার্টির সভাপতি আলাউদ্দিন মৃধা প্রার্থী হবেন বলে জানিয়েছেন।তবে ভোটের মাঠে এই প্রার্থীর তেমন পরিচিতি ও গ্রহণযোগ্যতা নেই বলে জানিয়েছেন এই আসনের সাধারণ ভোটাররা। তবে আওয়ামীলীগ বিরোধী ভোটারদের ভোট কেন্দ্রে নিয়ে যেতে পারলে তিনিও আলোচনায় চলে আসতে পারেন। তবে সাধারণ মানুষের অভিমত নিয়ম রক্ষার এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগই প্রতিদ্ব›িদ্ব।
আওয়ামী লীগের দলীয় সূত্র জানিয়েছেÑ গুরুদাসপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক পৌর মেয়র শাহনেওয়াজ আলী ভোটের মাঠের প্রভাবশালী একজন প্রার্থী। গুরুদাসপুর থেকে তার সাথে পাল্লা দিচ্ছেন প্রয়াত সংসদ সদস্যের জ্যেষ্ঠ কন্যা নাটোর জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আ্যাডভোকেট কোহেলী কুদ্দুস মুক্তি, গুরুদাসপুর উপজেলা চেয়ারম্যান মো. আনোয়ার হোসেন, জেলা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ সাবেক ছাত্রনেতা আহম্মদ আলী মোল্লা, গুরুদাসপুর পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মো. জাহিদুল ইসলাম, এছাড়াও বড়াইগ্রাম থেকে প্রার্থীতা ঘোষণা করেছেন জেলা আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিয়ষক সম্পাদক উপজেলা চেয়ারম্যান ডা. সিদ্দিকুর রহমান পাটোয়ারী, বনপাড়া পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি মেয়র কেএম জাকির হোসেন, উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আ্যাডভোকেট আরিফুর রহমান সরকার । তারা দলীয় প্রতীক নৌকা পেতে জোর তৎপরতা চালাচ্ছেন। এছাড়া আরো কয়েনজন নেতার প্রার্থী হওয়ার খবর শোনা গেলেও তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে বেশীর মনোনয়ন প্রত্যাশীরা ঢাকায় অবস্থান করছেন। তারা দলের হাই কমান্ডের সাথে যোগাযোগের মাধ্যমে নিজের প্রার্থীতা নিশ্চিত করতে চাইছেন। এই আসনের সাধারণ মানুষ অপক্ষো করছেন আওয়ামীলীগ কাকে মনোনয়ন দেন সেটা জানার জন্য ।

দলীয় নেতা-কর্মীরা বলছেন, গুরুদাসপুরের রাজনীতিতে যেমন দ্বিধা-বিভক্তি রয়েছে, তেমনি বড়াইগ্রামেও। আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল বারীর মতেÑ দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগের একটা বৃহৎ অংশ গুরুদাসপুরের পৌর মেয়র শাহনেওয়াজ আলীর সাথে রয়েছে। শাহনেওয়াজ আলী ছাত্র রাজনীতি করেছেন। টানা আঠারো বছর ধরে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। অথচ রাজনৈতিক প্রতিহিংসায় এই নেতাকে সর্বশেষ কমিটিতে রাখা হয়নি।
তিনি বলেন, শাহনেওয়াজ আলী একজন সাংগঠনিক নেতা। এই নেতা টানা তৃতীয়বারের মতো আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী হিসেবে পৌর মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন। তারা শাহনেওয়াজ আলীকেই দলের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে দেখতে চান। অন্যথায় স্বতন্ত্র প্রার্থী দেওয়া হবে তাদের পক্ষ থেকে এমনটি শোনা যাচ্ছে।
গুরুদাসপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল মতিন বলেন, বর্তমান প্রার্থী কোহেলী কুদ্দুস মুক্তির পিতা প্রয়াত বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল কুদ্দুস ছিলেন বঙ্গবন্ধুর আদর্শের রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। টানা সাতবার নৌকা নিয়ে পাঁচবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। জেলা আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব দিয়েছেন টানা দুইবার। তাই নৌকার বিজয় ধরে রাখতে প্রয়াত এমপির কন্যা কোহেলী কুদ্দুস মুক্তিকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়া উচিত। আবার জাহিদুল ইসলাম বিভিন্ন মসজিদ- মন্দির ও সাধারণ মানুষের কাছে উপনির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার জন্য দোয়া প্রার্থনা করছেন। তার বিশ^াস জননেত্রী শেখ হাসিনা তাকেই মুল্যায়ন করবেন।

এদিকে মনোনয়ন পাওয়ার দৌড়ে নিজেকে অনেকখানি এগিয়ে রেখেছেন সাবেক ছাত্র নেতা আহম্মদ আলী মোল্লা। তিনি জানান, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন। এখন তিনি জেলা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যাক্ষ। মূলত তারুন্য নির্ভর প্রার্থী বছাই করতে গেলে তিনিই যোগ্য।
গুরুদাসপুরের প্রভাবশালী প্রার্থী পৌর মেয়র শাহনেওয়াজ আলী বলেন, দীর্ঘদিন ধরে তিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতি করছেন। পৌর নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া টানা তিনবারের মর্যাদা তিনি রক্ষা করেছেন। এখন সময় এসেছে পরিবারতন্ত্র বাদ দেওয়ার। সবমিলিয়ে মনোনয়ন দৌড়ে তিনিই একমাত্র যোগ্য প্রার্থী। তাকে নৌকা দেওয়া হলে বিপুল ভোটে আওয়ামী লীগের বিজয় নিশ্চিত হবে।
এদিকে মনোনয়ন প্রত্যার্শী এড. কোহেলী কুদ্দুস মুক্তি বলেন, তিনি সংগঠনের সাথে রয়েছেন ছাত্রজীবন থেকেই। দলের সংকটময় সময়ে তিনি রাজপথে থেকে আন্দোলন সংগ্রাম করেছেন। তাকে মনোনয়ন দেওয়া হলে প্রধানমন্ত্রীর আস্থার প্রতিদান দেওয়ার পাশাপাশি প্রয়াত পিতা আব্দুল কুদ্দুসের অসমাপ্ত কাজগুলো তিনি সমাপ্ত করবেন।
অপরদিকে ডা. সিদ্দিকুর রহমান বলেন, বরাবরই গুরুদাসপুর থেকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী দেওয়া হয়। অথচ বড়াইগ্রামের আয়তন বড় এবং ভোটার সংখ্যা গুরুদাসপুরের চেয়ে বেশি। এযুক্তি দেখিয়ে তিনি এবার দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার আশা করছেন।
আবার বনপাড়া পৌর মেয়র জাকির হোসেন বলেন, আমি আওয়ামী লীগ পরিবারের সন্তান। আওয়ামী রাজনীতি করতে গিয়ে তার বাবা ডা. আয়নুল হক জীবন দিয়েছেন। তাই তিনি নেত্রীর কাছে দলীয় মনোনয়নের জন্য জোর দাবি জানাবেন।
আ্যাডভোকেট আরিফুর রহমানও বলেন, তার বাবা রফিক উদ্দিন সরকার বড়াইগ্রামের একমাত্র দলীয় এবং প্রথম সংসদ সদস্য ছিলেন। তার বাবাও রাজনীতি করতে গিয়ে শহীদ হয়েছেন। তার দাবি, বড়াইগ্রামের দীর্ঘদিনের খরা কাটিয়ে তাকে নৌকা প্রতিকে নমিনেশান দেওয়া হোক।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
COPYRIGHT 2023 sangbadshoily, ALL RIGHT RESERVED
Site Customized By NewsTech.Com