স্টাফ রিপোর্টার
নাটোরের সিংড়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হতে ইচ্ছুক দেলোয়ার হোসেন, তাঁর ভাইসহ তিনজনকে অপহরণের অভিযোগে নাটোর থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এ ঘটনায় দেলোয়ার হোসেনের ভাই মজিবর রহমান বাদী হয়ে গত রাত একটা ১৫ মিনিটে অজ্ঞাত ১৫/২০ জনকে অভিযুক্ত করে একটি মামলা দায়ের করেছেন। পুলিশ এ ঘটনায় দুইজনকে গ্রেফতার করেছে। দেলোয়ার হোসেন এ ঘটনায় সিংড়া উপজেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সম্পাদক ও চেয়ারম্যান প্রার্থী হতে ইচ্ছুক তথ্য ও যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের শ্যালক লুৎফুল হাবিব রুবেলকে দায়ী করেছেন। তবে লুৎফুল হাবিব রুবেল এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। গ্রেপ্তারকৃত দুজন হলেন সিংড়া উপজেলার হারোবারিয়া গ্রামের জাহিদুল ইসলামের ছেলে নাজমুল হক বাবু-৩২ এবং কৃষ্ণপুর গ্রামের আব্দুস সামাদের ছেলেসুমন হোসেন ৩০।
পুলিশ ও ভুক্তভোগীদের পরিবার সূত্রে জানা গেছে, উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন লুৎফুল হাবীব রুবেল।গত রবিবার পর্যন্ত তাঁর প্রতিদ্বদ্বী কেউ মনোনয়নপত্র জমা দেননি। গতকাল সোমবার সকালে অনলাইনে মনোনয়নপত্র দাখিলের জন্য দেলোয়ার হোসেন নাটোর স্টেশন এলাকার একটি কম্পিউটারের দোকানে আসেন। এ সময় তাঁর বড় ভাই ও কলম ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এমদাদুল হক এবং কলম ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আলাউদ্দিন মুন্সি ব্যাংকে জামানতের টাকা জমা দেওয়ার জন্য বের হন। এরপর তাঁরা দুজন কোড নম্বর জানার জন্য নাটোর জেলা নির্বাচন কার্যালয়ের সামনে এলে কালো মাইক্রোবাসে করে কয়েকজন যুবক তাঁদের পথরোধ করেন।
এক পর্যায়ে তাঁদের জোর করে মাইক্রোবাসটিতে তুলে নিয়ে যান যুবকরা। এর পর থেকে তাঁদের মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যাচ্ছিল। অনেক খোঁজাখুঁজি করে না পাওয়ায় দেলোয়ার ৯৯৯ নম্বরে ফোন করে ঘটনাটি জানান দেলোয়ার হোসেন।
তবে বিকেল ৩টা ৩২ মিনিটে উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি হাসান ইমাম ফোনে জানান, নিখোঁজ দুই আওয়ামী লীগ নেতাকে নিয়ে তিনি মাইক্রোবাসে করে তাঁদের বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছেন। তিনি তাঁর মোবাইল ফোনে আলাউদ্দিন মুন্সির সঙ্গে কথা বলিয়ে দেন।
এ সময় আলাউদ্দিন জানান, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি হাসান ইমাম তাঁদের নাটোর থেকে গাড়িতে করে নিয়ে এসেছেন। তাঁরা তাঁর সঙ্গে আছেন। তবে তাঁদের এখনো উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ।
অপর দিকে চেয়ারম্যান প্রার্থী হতে ইচ্ছুক দেলোয়ার হোসেন জানান, বিকেল পৌনে ৪টার দিকে তিনি জেলা নির্বাচন কার্যালয়ে যান মনোনয়নপত্র জমা দিতে। বিকেল ৪টার কিছু পরপরই একটি মাইক্রোবাসে করে দুর্বৃত্তরা জেলা নির্বাচন কার্যালয়ে আসে। তারা দেলায়ারকে কিল-ঘুষি মারতে মারতে জোর করে মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে যায়। এ সময় সেখানে একজন সাংবাদিকও উপস্থিত ছিলেন। উপস্থিত সাংবাদিক কামাল হোসেন জানান, সিংড়া উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক মোহন আলীসহ কয়েকজন যুবক দেলোয়ারকে মারতে মারতে গাড়িতে তুলে নিয়ে যান। এ বিষয়ে জানতে মোহন আলীর মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করলেও তিনি তা ধরেননি।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে লুৎফুল হাবীব রুবেল বলেন, এ বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না। তিনি গণসংযোগে ব্যস্ত ছিলেন। এ সময় এক কর্মীর কাছ থেকে তিনি বিষয়টি শোনেন।
সিংড়া থানার ওসি আবুল কালাম জানান, ৯৯৯ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ তাঁদের উদ্ধারে নামে। অপহৃত ও অপহরণকারীদের অবস্থান নিশ্চিত হওয়ার চেষ্টা চালায়।এ পরে কলম বাজার থেকে তাঁদের উদ্ধার করা হয়। এর মধ্যে এমদাদুল হক গুরুতর আহত হওয়ায় তাঁকে প্রথমে সিংড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এবং পরে রামেক হাসপাতালে পাঠানো হয়। তবে ঘটনাস্থল নাটোর হওয়ায় সিংড়া থানায় কোনো মামলা করা হয়নি।অপরদিকে আহত দেলোয়ার হোসেন প্রথমে নাটোর সদর হাসপাতাল ও পরে রামেক হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন ।
পুলিশ সুপার তারিকুল ইসলাম বলেন, এ বিষয়ে নাটোরথানায় মামলা দিতে বলায় রাতে দেলোয়ারের ভাই বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেন। পুলিশ সিসি টিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে এ ঘটনায় জড়িত বাবু ও সুমনকে গ্রেফতার করেছে। অন্যান্য আসামীদের গ্রেফতার এবং মাইক্রোবাস উদ্ধারে পুলিশি অভিযান অব্যাহত রয়েছে।