স্টাফ রিপোর্টার
পবিত্র ঈদ উলল ফিতরকে সামনে রেখে গ্রামের পাড়া-মহল্লায় ব্যাপক সাড়া ফেলেছে ব্যতিক্রমী গ্রামীণ প্রথা ‘গোশত সমিতি’। কসাইদের নানা অনিয়মের কারণে এলাকার মানুষ সমিতির মাধ্যমে টাকা সঞ্চয় করে। সেই সঞ্চিত টাকা দিয়ে পশু কিনে তারা গোশতের চাহিদা পুরণ করে। সেহরী খাওয়ার পরই শুরু হয় গরু জবেহ। আনন্দে মুখরিত হয়ে উঠে পাড়া মহল্লাবাসী। রাস্তার পাশে দেখা যায় মানুষের জটলা। জায়গায় জায়গায় সাজানো থাকে গোশতের পসরা। এভাবে গরু কিনে ঈদের পূর্ব মহুর্তে কম দামে গোশত ভাগাভাগি করে নিয়ে অনেক খুশি নি¤œ ও মধ্যবিত্ত আয়ের মানুষ।
জানাযায়- গ্রামের পাড়া মহল্লায় নি¤œ আয়ের মানুষগুলো বেশ কয়েকজন একত্রে মিলিত হয়ে একটি সমিতি বা সংগঠন তৈরী করে। যার নাম দেওয়া হয় গোশত সমিতি। অনেকের কাছে আবার খাই খাই সমিতি বা গোশত খাওয়া সমিতি নামেও পরিচিত। সমিতির সকল সদস্য মিলে সাপ্তাহিক বা মাসিকভাবে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা জমায়। বছর শেষে ঈদ, শবে বরাত, শবে কদর, ইসলামী জালসা এবং গ্রামীণ মেলাকে কেন্দ্র করে সেই সমিতির মাধ্যমে জমাকৃত টাকায় গরু কিনে গোশত ভাগাভাগি করে নেয়া হয়। এতে গোশতের দাম বাজার তুলনায় অনেক কম হয়। কম দামে ভেজালমুক্ত গোশত পেয়ে সমিতির সকল সদস্যদের মুখে দেখা যায় হাসির ঝিলিক।
অনেকের কাছেই গোশত সমিতি ব্যাপক সাড়া ফেলেছে এ সমিতি। বাজারে গরুর গোশতের দাম বেশি হওয়ায় মুলত এই সমিতিগুলোর সৃষ্টি হয়েছে। লোকজন এ সমিতি থেকে উপকৃত হওয়ায় প্রত্যন্ত অঞ্চলের পাড়া-মহল্লায় এর প্রচলন ব্যাপক হারে বেড়ে গেছে।
গত সোমবার থেকে লক্ষ্য করা যায় নাটোর শহরের বিভিন্ন মহল্লায় শুরু হয়েছে ঈদ উৎসবের জণ্য সমিতি ভিত্তিদক গুরু কনো গ,গরু জবাই ও গোশ ভাগাভাগী নিয়ে ব্যস্ত অনেকেই। অনেক মহল্লায় গড়ে উঠেছে এধরণের একাধিক সমিতি। এসব সমিেিত মূলতক সপ্তাহে একশ টাকা কওে জমিয়ে পাঁচ হাজার দুইশ টাকা জমানো হয়। এরপর সেই টাকার অংকে গোশত ভাগ কওে দেয়া হয়। একই অবস্থা জেলার বিভিন্ন গ্রামের পাড়া-মহল্লায় । কোন কোন সমিেিত আবর বেশী টাকা জামনো হয়। এদেও লক্ষ্য থাকে ।ূদ উল অজহার জণ্য গরু কেনা ও ভাগ ভিত্তিতে কোরবানী দেওয়া হয়। এজন্য নির্দ্দিষ্ট পরিমাণ টাকা সপ্তাহে জমানো হয়। বছর শেষে সেই টাকা দিয়ে গরু কেনা হয়। নাটোর শহরের কাঠাল বাড়িয়া মহল্লার রাজু আহমেদ বলেন তারা এধরণের সমিতি গত কয়েক বছর ধরে চালিয়ে আসছেন। এতে অল্প অল্প কওে টাকা জমিয়ে বছরের বড় দুটো ঈদ উৎসবে গুরু কিনে জবাই কওে গোশথ ভাগ কওে নেয়া হয়। গুরুদাসপুর উপজেলার পোয়ালশুরা দড়ি পাড়া মহল্লার লুৎফর রহমান জানান- সংসারের তার নুন আনতে পান্তা ফুরোয় অবস্থা। ছেলে-মেয়ে, বাবা-মা নিয়ে একত্রে ঈদে উদযাপন করতে অতিরিক্ত খরচ হয়। ঈদে গরুর গোশতের চাহিদা সবারই থাকে। কিন্তু দিনমজুরের কাজ করে একসাথে অনেক টাকায় গোশত কেনা তার জন্য কষ্টসাধ্য। গত বছর সন্তানদের বায়না পূরণ করতে না পেরে এ বছর সমিতির সদস্য হয়েছেন।
একই মহল্লার গোশত সমিতির উদ্যোক্তা খান মোহাম্মাদ, আব্দুল হান্নান, মো. সাঈদুল মাস্টার জানান- তারা প্রায় সাত বছর ধরে গোশত সমিতি তত্বাবধান করছেন। এবছর তাঁর সমিতির সদস্য সংখ্যা ৫৫ জন। সদস্যরা দৈনিক ১০ টাকা হিসাবে মাসে ৩০০ টাকা করে অর্থ জমা রাখেন। বছর শেষে ঈদের আগে সবার জমাকৃত টাকায় গরু কিনে সমহারে বন্টন করা হয়। তাদের গ্রামে এরকম প্রায় ৫টি সমিতি আছে।
এবছর তারা ২ লাখ ২০ হাজার টাকায় একটি গরু কিনে গোশত বন্টন করছেন। প্রতিকেজি গোশতের দাম পরেছে ৫৯০ টাকা। বাজার দরের চেয়ে কম দামে এবং এক সাথে বেশি পরিমাণ গোশত পেয়ে সবাই খুশি। নাটোর পৌর কাউন্সিলর জাহিদুর রহমান জাহিদ বলেন এটি একটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ। কারণ ঈদ উল ফিথর ও ঈদ উল আজহায় সবাই মিলে গরু কিনে গোশত ভাগ কওে নেয়া বা কোরবানী দেয়ার আনন্দটাই আলাদা।