স্টাফ রিপোর্টার
মনোনয়ন পত্র জমা দিতে এসে উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী হতে ইচ্ছুক তিনজনকে অপহরণের অভিযোগ উঠেছে আওয়ামীলীগের এক নেতার বিরুদ্ধে। পুলিশ অপহৃতদের উদ্ধার করে। এদের মধ্যে গুরুতর আহত একজনকে প্রথমে সিংড়া ও পরে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। নাটোরের পুলিশ সুপার অপহরণের বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, ঘটনা জানার পর পরই পুরিশ অভিযানে নামে এবং অপহৃতদের উদ্ধার করতে সক্ষম হয়। এ ঘটনার জন্য সিংড়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হতে ইচ্ছুক দেলোয়ার হোসেন উপজেলা চেয়ারম্যান হতে ইচ্ছুক প্রার্থী সিংড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও শেরকোল ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান লুৎফুল হাবীব রুবেলকে দায়ী করেছেন। লুৎফল হাবিব রুবেল তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের শ্যালক।
পুলিশ ও ভুক্তভোগীদের পরিবার সূত্রে জানা যায়, উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন লুৎফুল হাবীব রুবেল। গতকাল রোববার পর্যন্ত তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী কেউ মনোনয়নপত্র দাখিল করেননি। আজ সোমবার সকালে অনলাইনে মনোনয়নপত্র দাখিলের জন্য দেলোয়ারহোসেন নাটোর স্টেশন এলাকার একটি কম্পিউটারের দোকানে আসেন। এ সময় তাঁর বড় ভাই ও কলম ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এমদাদুল হক এবং কলম ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আলাউদ্দিন মুন্সি ব্যাংকে জামানতের টাকা জমা দেওয়ার জন্য বের হন। এরপর তাঁরা কোড নম্বর জানার জন্য নাটোর জেলা নির্বাচন কার্যালয়ের সামনে এলে বেলা সাড়ে এগারটারদিকে কালো মাইক্রোবাসে করে কয়েকজন যুবক তাঁদের পথরোধ করেন। একপর্যায়ে তাঁদের জোর করে ওই মাইক্রোবাসে করে তাঁরা তাঁদের তুলে নিয়ে যান। এর পর থেকে তাঁদের মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়। অনেক খোঁজাখুঁজি করে না পাওয়ায় দেলোয়ার ৯৯৯ নম্বরে ফোন করে ঘটনাটি জানান।
তবে বেলা ৩টা ৩২ মিনিটে উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি হাসান ইমাম জানান, নিখোঁজ দুই আওয়ামী লীগ নেতাকে নিয়ে তিনি মাইক্রোবাসে করে তাঁদের বাড়ির উদ্দেশে রওনা হয়েছেন। তিনি তাঁর মুঠোফোনে অপহৃত কলম ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আলাউদ্দিন মুন্সির সঙ্গে কথা বলিয়ে দেন।
এ সময় আলাউদ্দিন মুন্সি জানান, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি হাসান ইমাম তাদের নাটোর থেকে গাড়িতে করে নিয়ে এসেছেন। তাঁরা তাঁর সঙ্গে আছেন। তবে তাঁদের এখন উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ।
বিকেল পৌনে চারটার দিকে দেলোয়ার হোসেন এই প্রতিনিধির কাছে ঘটনার বর্ণনা দিয়ে তাঁর অপর সহোদর ভাইকে নিয়ে জেলা নির্বাচন কার্যালয়ে যান মনোনয়নপত্রের প্রতিলিপি জমা দিতে। বিকেল চারটার কিছু পরপরই একটি মাইক্রোবাসে করে দুর্বৃত্তরা জেলা নির্বাচন কার্যালয়ে আসেন। তাঁরা প্রার্থী দেলায়ার হোসেনকে কিলঘুষি মারতে মারতে জোর করে মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে যান। এ সময় সেখানে একজন সাংবাদিকও উপস্থিত ছিলেন। উপস্থিত সাংবাদিক কামাল হোসেন জানান, সিংড়া উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক মোহন আলীসহ কয়েকজন যুবক দেলোয়ারকে মারতে মারতে গাড়িতে তুলে নিয়ে যান। এ বিষয়ে জানতে মোহন আলীর মুঠোফোনে একাধিকবার ফােন করলেও তিনিও ফোন ধরেননি।
সিংড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবুল কালাম জানান, ৯৯৯ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে তিনি সকালের ঘটনার প্রাথমিক তথ্য পেয়েছেন।এরপর পুলিশ তাদের উদ্ধারে নামে অপহৃত ও অপহরণকারীদেরতাঁদের অবস্থান নিশ্চিত হওয়ার চেষ্টা চালায়। পরে কলম বাজার থেকে তাদের উদ্ধার করা হয়। এদের মধ্যে এমদাদুল হক গুরুতর আহত হওয়ায় তাকে সিংড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এবং পরে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। পুলিশ সুপার তারিকুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি জানার পরেই পুলিশকে কয়েক দলে বিভক্ত হয়ে পুলিশ দুর্বৃত্তদের আটক করার জন্য ও অপহৃত দেলোয়ারকে ও তার ভাইদের উদ্ধারের জন্য তৎপরতা শুরু করেছে।পরে পুলিশের উপস্থিতি বুঝতে পেরে কলম বাজারে ফেলে যাায়। এ বিষয়ে তাদেরকে নাটোর থানায় অভিযোগ দিতে বলা হয়েছে। আহত এমদাদুল হক ও দেরোয়ার হোসেনকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
জেলা প্রশাসক আবু নাছের ভূঞা জানান, তিনি নির্বাচন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে ঘটনার বিষয়ে নিশ্চিত হয়েছেন। তিনি পুলিশ সুপারকে বিভিন্ন স্থানে চৌকি বসিয়ে ওই মনোনয়নপ্রত্যাশী প্রার্থীকে উদ্ধারে পদক্ষেপ নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। তদন্ত করে এ ঘটনার সঠিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ বিষয়ে লুৎফুল হাবিব রুবেল বলেন, তিনি এ ঘটনার কিছুই জানেন না। তিনি গণসংযোগে ব্যস্ত ছিলেন। একজন কর্মি ফেসবুকে দেখে প্রথমে তাকে জানায়।