শেফালী রানী পাল নাটোর
পয়ত্রিশ বছর বয়সী শারীরিক প্রতিবন্ধী নাসরিন আক্তার। গেল সাত বছর আগে অসুস্থ্য জনিত কারণে হন প্রতিবন্ধী। এমন অবস্থার পাঁচ বছরের মাথায় মারা যান দিনমজুর স্বামীও। স্বামী বিদায়ে জায়গা হয়নি শ্বশুর বাড়িতে নাসরিনের। এমন পরিস্থিতিতে মাথায় আকাশ ভেঙে পড়েছে নাসরিনের। তিনি ১৮ বছরের ছেলে আতিশ ইসলামকে নিয়ে শূন্যহাতে ফিরছেন কৃষক বাবার বাড়িতে।
নাসরিন নাটোর সদর উপজেলার বড় হরিশপুর এলাকার কামার দিয়ার গ্রামের ইসমাইল হোসেনের মেয়ে। অভাবের সংসারে ইসমাইলের এক ছেলে ও দুই মেয়ে। তারা নিজ নিজ সংসার নিয়ে ব্যস্ত। কিন্তু স্বামীর মৃত্যুর পরে ফের বাড়িতে ফিরে আসায় বৃদ্ধ বয়সে অথই সাগরে পড়েছেন ইসমাইল হোসেন।
পরিবার সূত্রে জানা গেছে- নাসরিন আক্তার নাটোর উত্তর বড়গাছা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে ৮ম শ্রেণি পাস করেন। পরে নবম শ্রেণিতে ভর্তি হন শের-ই-বাংলা উচ্চ-বিদ্যালয়ে। সেখানে ১০ম শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় বিয়ে পিড়িতে বসতে হয় তাকে। প্রায় ২২ বছর আগে শহরের কানাইখালি মহল্লায় তাইজুল ইসলামের ছেলে দিনমজুর মিঠু ইসলামমের সঙ্গে পারিবারিক ভাবে বিয়ে হয় নাসরিনের।
সংসার জীবনে বিয়ে দুই বছরের মাথায় নাসরিন পুত্র সন্তানের মা হন। তার নাম আতিশ ইসলাম (২০)। তিনি স্থানীয় কলেজে পড়ালেখা করেন। এক সন্তান ও স্বামী-স্ত্রী নিয়ে তাদের সংসার ভালই চলছিল। হঠাৎ নাসরিন ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত হন। বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে চিকিৎসা নিয়েও স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারেনি। অসুস্থ্যতায় ডান পায়ে অপারেশন করতে হয়। এতে জীবনের তার নতুন অধ্যয় শুরু হয়। তিনি হয়ে যান প্রতিবন্ধী।
এরপর স্বামীও ২ বছর আগে স্টোক করে মারা যাওয়ায় নাসরিন আক্তারের শশুর বাড়িতে ঠাঁই হয়নি। সন্তানসহ বৃদ্ধ বাবা ইসমাইল হোসেনের বাড়িতে তাকে আশ্রয় নিতে হয়েছে। এতে অভাবের সংসারে বৃদ্ধ বাবার উপর বারতি চাপ এ যেন মরার উপর খাড়ার ঘা। তখন উপায় না পেয়ে প্রতিবন্ধী নাসরিন স্থানীয় মহিলা বিষিয়ক কার্যালয়ে দর্জি ও অ্যামব্রয়ডারি বিষয়ে ট্রেডে প্রশক্ষিণ নেন। কিন্তু সেলাই মেশিনের অভাবে তিনি কাজও করতে পারছেন না। ফলে তার প্রশিক্ষণ যেনো বৃথা হতে বসেছে।বাদ্য হয়ে বান্ধবীর প্রতিষ্টানে সেলাইয়ের কাজ করছেন। সেখান থেকে যা পান তাই দিয়ে কষ্টে চলছে তাদের জীবন।
নাসরিন আক্তার বলেন, প্রতিবন্ধী মানুষকে এই সমাজের লোক ভালোভাবে দেখে না।
আগের স্বাভাবিক জীবনে সাদামাটা চোখে দেখা হতো। এখন প্রতিবন্ধী জীবনে মানুষ আমাকে রঙ্গীন চশমায় দেখে। পেছনে লোকে অনেকই কিছুই বলে। এসব নিয়ে মন খারাপ করে লাভ নাই। আর পেছনে লোকে কি বললো তাতে কিছু যায় আসে না। তাই ঘরে বসে না থেকে মহিলা বিষিয়ক অধিদপ্তরে প্রশক্ষিণের মাধ্যমে নিজেকে দক্ষ সম্পদ হিসাবে গড়া যায়, সেই দিকে ছুটছি।
এদিকে নিজের পায়ে দাঁড়াতে দর্জি ও অ্যামব্রয়ডারি বিষয়ে প্রশক্ষিণ নিলেও অর্থভাবে সেলাই মেশিন কিন্তে না পারায় আত্মকর্মসংস্থান সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছি। যদি কেউ একটা সেলাই মেশিনের ব্যবস্থা করতেন এতে তিনি এবং তার কলেজ পড়ুয়া সন্তান উপকৃত হবেন বলে এমনটাই প্রত্যাশা।
নাসরিন আক্তারের বান্ধবী শহরের বঙ্গজল এলাকার স্নিগ্ধা বলেন, দুজন এক সাথে পড়া-লেখা এবং বড় হওয়ার পর বিয়ে হয়ে আলাদা হয়ে গেছি। আমার স্বামীর মৃত্যুর পর তাকে শশুর বাড়ি থেকে বিতারিত করেছে জেনে দর্জি ও অ্যামব্রয়ডারি প্রশিক্ষণ নিতে বলি। কাজ শিখে সেলাই মেশিন না থাকায় আমার বাসায় এসে কাজ করে। এতে তার দুর থেকে এসে সেলাই কাজ করা কষ্ট তাও আবার সে প্রতিবন্ধি।
অন্য আরেক প্রশক্ষিণার্থী বলনে, আত্মকর্ম এসব শিখলে নিজেদের হাত খরচের টাকাটাও পাওয়া যায়। আবার কাজও শিখা যায়, তাই কাজগুলো শিখছি। আমরা ভাতাও পাচ্ছি কাজ শেখার জন্য। ১৮ থেকে ৪৬ বছর বয়সী নারীদরে ৬টি বিষয়ে প্রশক্ষিণ প্রদান করছে মহলিা বিষয়ক অধদিপ্তর।
মহিলা অধিদপ্তরের নাটোর জেলা মহিলা বিষিয়ক র্কমর্কতা নীলা হাফিয়া বলনে, দর্জি বিজ্ঞান, বিউটিফিকিশেন, নার্সারী, মোমবাতি ও শপিং ব্যাগ তৈরি প্রশক্ষিণ মোট ৫টি ট্রেড চলমান রয়েছে।
এসব ট্রেডে প্রশক্ষিণরে জন্য দৈনিক ১০০ টাকা ভাতা পাচ্ছে। প্রতি ৩ মাস পরপর নতুন করে ভর্তি নেয়া হয়। জীবিকায়ন প্রকল্পে গত ২০১৪ সালে ১৪ অক্টোবর থেকে ২০২৫ সালের ১ অক্টোবর অষ্টম শ্রেণি থেকে এইচএসসি পাস র্পযন্ত নাটোরে ৪ হাজার ৮০০ প্রশক্ষিণার্থী নারী ৫টি বিষয়ে প্রশক্ষিণ গ্রহণ করছেনে।
এ বিষয়ে নাটোর জেলা সমাজসেবা উপ-পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, সরকার প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের ক্ষমতায়ন এবং সুস্থভাবে জীবন যাপনে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। সমাজ কার্যলয়ের মাধ্যমে বয়স্ক, অস্বচ্ছল প্রতিবন্ধী, বিধবা, হিজড়া, বেদে বয়স্ক এই ৬ ধরনের ব্যক্তিদের ৫০০ টাকা থেকে শুরু করে ৯০০ টাকা হারে প্রতি মাসে ভাতা দেওয়া হয়। এরমধ্যে জেলায় ৪৮ হাজার ৮২৪ জন শুধু প্রতিবন্ধীকে প্রতিবছর ৫২ কোটি ৭২লাখ ৯৯ হাজার ২০০ ভাতা দেওয়া হচ্ছে।
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের নাটোর জেলা পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শ্যামা বসাক বলেন, প্রতিবন্ধীরা সমাজের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠি। নারী প্রতিবন্ধী হলে তারা আরও বেশি অবহেলিত ও বঞ্চনার শিকার হন। এই প্রকল্পের মাধ্যমে নারী প্রতিবন্ধীদের অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে।
প্রতিবন্ধী সংগঠন নন্দন জেলা কমিটির আহবায়ক আব্দুল বলেন, জেলায় প্রায় পঞ্চাশ হাজারের বেশী আমরা প্রতিবন্ধী ব্যক্তি রয়েছে। আমরা তাদের প্রাপ্ত অধিকার নিয়ে কাজ করি, এই জনগোষ্ঠীগুলোকে এগিয়ে নেওয়ার রাষ্টের যে সাংবিধানিক দায়িত্ব রয়েছে সমাজের অন্য জনগোষ্ঠীর মানুষের সেদিকে দৃষ্টি দিতে হবে। যাতে অন্যদের মত আমাদেরকে আলাদা করে না ভাবা হয়।
নাটোরের সিনিয়র সাংবাদিক ও সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) এর সভাপতি রেজাউল করিম রেজা বলেন, প্রতিবন্ধীদের মানবাধিকার নিশ্চিত করা আমাদের সাংবিধানিক ও নৈতিক দায়িত্ব। তারা নানা বৈষম্যের শিকার, বিশেষ করে গ্রামীণ অঞ্চলে। সরবারি বেসরকারি বিভিন্ন প্রকল্পের

