চৈত্র সংক্রান্তি ,শেখর কুমার স্যান্নাল

  • শনিবার, ১৩ এপ্রিল, ২০২৪
চৈত্র সংক্রান্তি, শেখর কমুার স্যান্নাল
sekhor

আজ চৈত্র সংক্রান্তি, চৈত্র মাসের শেষদিন। ‘সংক্রান্তি’ বলতে বোঝায় মাসের শেষ দিনে সূর্যের এক রাশি থেকে অন্য রাশিতে উত্তরণ। সূর্য আজ মীন থেকে প্রবেশ করবে মেষ রাশিতে। বসন্ত বিদায়ে গ্রীষ্মের সূচনা।
ঋতুরাজ বসন্তের কোমলগান্ধার অবসানে শোনা যাবে গ্রীষ্মের রুদ্রবীণার হা হা রব। তাই ‘বসন্তের এই ললিত রাগে- বিদায়-ব্যাথা লুকিয়ে জাগে-
এক সময় সব সংক্রান্তিই উৎসবের আমেজে পালন করতেন গ্রামবাংলার মানুষ। কালের গর্ভে আর সব হারিয়ে গেলেও আজো বাঙালি বাঁচিয়ে রেখেছে দুটি ঐতিহ্য- পৌষপার্বণ আর চৈত্র সংক্রান্তি।
সাতাশটি নক্ষত্রের নামে দক্ষরাজ তাঁর সুন্দরী কন্যাদের নাম রেখেছিলেন। এদের দু’কন্যা চিত্রা ও বিশাখা। এক মাস ব্যবধানে জন্ম কন্যা দুটির নামে পরিচিত পেল বাংলা পঞ্জিকার দুটি মাস- চিত্রা নক্ষত্র থেকে চৈত্র আর বিশাখা নক্ষত্র থেকে বৈশাখ।
চৈত্রের শেষ আর বৈশাখের শুরু। বাঙালির সবচেয়ে জাঁকজমকপূর্ণ উৎসব পালিত হয় এই দুই দিনে। তবে চৈত্র সংক্রান্তির পাল্লাই ভারি। বাংলার সব চেয়ে বেশি উৎসব জড়িয়ে রয়েছে চৈত্র সংক্রান্তির সাথে। বাংলার মানুষ এই দিনকে কেন্দ্র করে উৎসবে মেতে ওঠেন। কখনো ধর্মীয় বিশ্বাস, কখনো আবহমান বাংলার ঐতিহ্য আর লোকায়ত উৎসবের আমেজ পাওয়া যায় এই দিনকে ঘিরে।

বৈশাখ , ছবি এম আসলাম লিটন।

বৈশাখ , ছবি এম আসলাম লিটন ।

চৈত্র সংক্রান্তির দিন একসময় গ্রামের ঘরে ঘরে শাকান্ন পালিত হতো। ঝোপঝাড় থেকে অনাবাদী শাক তুলে আনতো পল্লীবধূরা। চৌদ্দ পদের শাক দিয়ে হতো দুপুরের আহার। আজও কোন কোন গ্রামে ধর্ম-বর্ণ-শ্রেণি নির্বিশেষে শাকান্ন উৎসব দেখতে পাওয়া যায়।
চৈত্র সংক্রান্তির দিন গ্রামের বাড়িতে খাওয়া হতো গমের ছাতু, দই আর পাকা বেল দিয়ে তৈরি বিশেষ শরবত। এই শরবতে গরমে প্রাণ জুড়িয়ে নিত উৎসবে যোগ দেওয়া মানুষ। গ্রামের হাটে কোন কোন দোকানি এই শরবত দিয়ে আপ্যায়ন করতেন ক্রেতাদের।
চৈত্র সংক্রান্তির দিন একসময় গ্রামবাংলার মুসলমান সম্প্রদায় খোলা মাঠে জামাতে নামাজ আদায় করতেন। হতো বিশেষ মোনাজাত অনাবৃষ্টি থেকে নিষ্কৃতি আর নববর্ষের শুভ কামনায়।
চৈত্র সংক্রান্তির দিন সনাতন পন্থীদের লোকজ পূজার চল ছিল। কয়েকদিন ধরে পালিত হতো চড়ক আর নীলের পূজা। চড়কের সাথে জড়িয়ে আছে শিবের গাজন। চড়ক উপলক্ষ্যে অনেক গ্রামে আজও বসে সপ্তাহব্যাপী মেলা।
চৈত্র সংক্রান্তির দিন বরেন্দ্র অঞ্চলে পালিত হয় গম্ভীরা গীতোৎসব।
ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী উদযাপন করে তাদের প্রধান উৎসব ‘বৈসাবি’ চৈত্র সংক্রান্তি ও নববর্ষের দিনে। বৈসাবি’র ‘বৈ’ এসেছে ত্রিপুরাদের ‘বৈসু’, ‘সা’ এসেছে মারমাদের ‘সাংগ্রাই’ এবং ‘বি’ এসেছে চাকমা ও তঞ্চঙ্গ্যাদের ‘বিজু’ থেকে।
সম্প্রদায় নির্বিশেষে পালিত হয়ে চৈত্র সংক্রান্তি অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়তে ভূমিকা রাখছে। এ উৎসবে নানা ধর্মের মানুষ ‘দিবে আর নিবে, মিলাবে মিলিবে’ এই হোক প্রত্যাশা।
ঈশানের পুঞ্জমেঘ অন্ধবেগে ধেয়ে চলে আসে
বাধাবন্ধহারা
গ্রামান্তের বেণুকুঞ্জে নীলাঞ্জনছায়া সঞ্চারিয়া
হানি দীর্ঘধারা।
বর্ষ হয়ে আসে শেষ, দিন হয়ে এল সমাপন,
চৈত্র অবসান—
গাহিতে চাহিছে হিয়া পুরাতন ক্লান্ত বরষের
সর্বশেষ গান।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
COPYRIGHT 2023 sangbadshoily, ALL RIGHT RESERVED
Site Customized By NewsTech.Com