চেয়ারম্যান প্রার্থী ও আওয়ামীলীগ নেতা রুবেলকে মনোনয়ন প্রত্যাহারের নির্দেশ

  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪
মনোনয়পত্র প্রত্যাহার করলেন অপহরণের দায়ে অভিযুক্ত প্রতিমন্ত্রী  পলকের শ্যালক রুবেল#সংবাদ শৈলী
rubel

স্টাফ রিপোর্টার

নাটোরের সিংড়া উপজেলা পরিদ নির্বাচনে মনোননয়ন জমা দেওয়ার শেষে দিনে নাটোর জেলা নির্বাচন কার্যালয়ের সামনে থেকে এক চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী তার ভাই ও অপরএকজন আওয়ামীলীগ নেতাকে অপহরণ ও মারধরের ঘটনায় অপর প্রার্থী তথ্য যোগাযোগ ও প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের শ্যালক মো. লুৎফুল হাবিব রুবেলকে প্রার্থীতাা প্রত্যাহারের নির্দেশ দিয়েছেন প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক ও উপজেলা আওয়ামীলীগ। শুক্রবার সকালে প্রতিমন্ত্রী পলক রাজশাহীতে অপপহরণ ও মারধরের কারণে আহত চেয়ারম্যান প্রার্থী দেলোয়ার হোসেনকে দেখতে আসনে এবং তার সাথে কথা বলার পরে মোবাইল ফোনে তিনি অপর চেয়ারম্যান প্রার্থী শ্যালক রুবেলকে এই নির্দেশ দেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পলকের ব্যক্তিগত সহকারী সাদ্দাম হোসেন এবং সিংড়া উপজেলাা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সিংড়া পৌর সভার মেয়র জান্নাতুল ফেরদৌস।
ফেরদৌস কালের কণ্ঠকে বলেন, তথ্য যোগাযোগ ও প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক অপহরণ ও মারধরের কারণে রাজশাহী মেডিকেল কলেজে শুক্রবার সকালে আহত দেলায়ারের সাথে দেখা করেন। পরে তিনি রাজশাহীতে সিংড়া উপজেলা আওয়ামীলীগ নেতৃবৃন্দের সাথে মত বিনিময়ের পর রুবেলকে প্রার্থীতা প্রতাহারের জন্য বলেন। প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ বলেন , প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামীলীগ সভাপতি শেখ হাসিনা এমপি মন্ত্রীর স্বজনদের প্রার্থী না হতে নির্দেশ দিয়েছেন। আওয়ামীলীগের একজন নেতা ও মন্ত্রী হিসেবে এই নির্দেশ মানা তার অবশ্যই করণীয়। এছাড়া প্রতিমন্ত্রীর শ্যালক রুবেলের বিরুদ্ধে অপহরণ এবং মারধরের অভিযোগ রয়েছে। সব মিলিয়ে তার প্রার্থীতা প্রত্যাহারের নির্দেশ দেওয়া হয়। সিংড়া উপজেলা আওয়ামলীগের সাধারণ সম্পাদক জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন , আমরা রাজশাহী থেকে সিংড়ায় ফিরেছি। আমরাও তাকে ইতমধ্যেই দলীয়ভাবে মনোনায়ন প্রত্যাহারের জন্য বলেছি। বিকালেই তাকে অপহরণ ও মারধরের বিষয়ে সোকজ করা হবে। এছাড়া আগামিকাল উপজেলা আওয়ামীলীগের জরুরী সভা আহবান করা হয়েছে। ওই সভায় চুড়ান্তভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা সহ যারা যারা অপহরণ ও মারপিটের সাথে জড়িত ছিলেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন প্রতিমন্ত্রী পলক দেশের বাইরে অবস্থান করায় তাদের সিদ্ধান্ত নিতে দেরী হয়েছে।
রাজশাহীতে অপহৃত দেলায়ারের সাথে দেখা করার সময় প্রতিমন্ত্রী এ্যাড. জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর এ বিষয়টি নজরে আসার পর তিনি সরাসরি তত্বাবধান করছেন। এ ঘটনার সাথে যারাই জড়িত, তাদের পরিচয় যাই হোক, যেন কঠোর আইন প্রয়োগ করা হয়। দুজনকে গ্রেফতারও করা হয়। আমি পুলিশ ও প্রশাসনের কাছে অনুরোধ করবো যেন আরও বাকী আসামিরা জড়িত আছেন, তাদের দ্রæত গ্রেফতার করবেন। যারা তাকে মাইক্রোবাসে অপহরণ করে তুলে নেয় আপনারা ভিডিও ফুটেজে দেখেন। এ হামলার সাথে সরাসরি যারা জড়িত এবং তাদের পিছনে কারা আছেন, তাদের গ্রেফতার করে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। পাশাপাশি আমাদের উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে কথা বলেছি। আমাদের আওয়ামী লীগের উপজেলা বা পৌর শাখার কেউ জড়িত থাকে, তাদের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ যেন সাংগঠনিক কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করে।

উল্লেখ্য বৃহস্পতিবার ইসির উপ সচিব মো. আতিয়ার রহমান স্বাক্ষরিত এক কারণ দর্শাও নোটিসে বলা হয়েছে, লুৎফুল হাবিব রুবেলের প্রার্থিতা কেন বাতিল করা হবে না, সোমবার কমিশনে হাজির হয়ে সে বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে রুবেলকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ইসির চিঠিতে বলা হয়েছে, ইতোমধ্যে স্থানীয় প্রশাসন ও গোয়েন্দা সংস্থা থেকে প্রতিবেদন পেয়েছে কমিশন। জাতীয় দৈনিক ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও ঘটনার সচিত্র বিবরণ এসেছে। এসব প্রতিবেদন ঘটনার প্রাথমিক সত্যতা ‘প্রমাণিত’ হয়েছে।

“এমন ঘটনার জন্য কেন আপনার প্রার্থিতা বাতিল বা আপনার বিরুদ্ধে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না- সে বিষয়ে লিখিত জবাবসহ নির্বাচন কমিশনে আগামী ২২ এপ্রিল বিকালে ব্যক্তিগতভাবে উপস্থিত হয়ে ব্যাখ্যা দিতে হবে।”

নির্বাচন কমিশন থেকে করা শোকজ নোটিসের বিষয়ে প্রশ্ন করলে লুৎফল হাবিব রুবেল বলেন, “নির্বাচন কমিশন থেকে এ ব্যাপারে আমি এখনও কোনো চিঠি পাইনি। চিঠি পেলেই সব প্রশ্নের উত্তর দেব।”

পুলিশও দেলোয়ারের পরিবার সুত্রে জানা যায়, গত সোমবার বিকালে নাটোর জেলা নির্বাচন কার্যালয়ের সামনে থেকে চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী দেলোয়ার হোসেনকে মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে যায় একদল লোক। কয়েক ঘণ্টা পর তাকে বাড়ির সামনে গুরুতর আহত অবস্থায় ফেলে যায় তারা। ওই প্রার্থীকে মারধরের ঘটনায় ইতোমধ্যে দুইজনকে গ্রেপ্তার করেছে নাটোর পুলিশ । গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে একজন আদালতে সুমন আহমেদ ১৬৪ ধারায় জবাবন্দীতে বলেন লুৎফুল হাবিব রুবেলের পক্ষে একমাত্র  প্রতিদ্বন্ধী প্রার্থী দেলোয়ার হোসেন কে অপহরণ ও মারধর করেন। তাদের সাথে কেকে ছিলেন তাও স্বীকার করেন তিনি। নাটোর থানার ওসি মিজানুর রহমান আদালতে স্বীকারোক্তি দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন কারা এ ঘটনায় জড়িত ছিলেন তাদের নাম ও বলেনছেন সুমন । তবে তদন্তের স্বার্থে নাটোর থানার ওসি তাদের নাম প্রকাশ করেননি তিনি।
অপর দিকে প্রার্থী দেলায়ার হোসেন তার ভাই আওয়ামীলীগ নেতা এমদাদুল হক এবং কলম ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আলাউদ্দিন মুন্সীকে অপহরণ ঘটনার জন্য  প্রার্থী লুৎফুল হাবিব রুবেল ও তার সমর্থকদের দায়ী করেছে দেলোয়ার হোসেনের পরিবার ও প্রার্থী দেলোয়ার হোসেন। লুৎফুল হাবিব রুবেল তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী ও নাটোর-৩ আসনের সংসদ সদস্য জুনাইদ আহমেদ পলকের শ্যালক। অপহরণ ও মারধরের অভিযোগ অস্বীকার করে আসছেন রুবেল।

মঙ্গলবার দেলোয়ার হোসেন ও লুৎফুল হাবিব রুবেলের মনোনয়নপত্র বাছাইয়ে বৈধ হয়। এরপর ওই ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয় বলে ইসি সচিব জাহাংগীর আলম জানান।ঘটনাস্থলের সিসি ক্যামেরায় ধরা পড়েছে অপহরণের মুহূর্ত।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
COPYRIGHT 2023 sangbadshoily, ALL RIGHT RESERVED
Site Customized By NewsTech.Com