স্টাফ রিপোর্টার
নাটোরের চলনবিল অধ্য্যুষিত গুরুদাসপুর উপজেলার বিলসা গ্রামে শুক্রবার বেলা ২টা থেকে শুরু হয় নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতা। বিলুপ্ত প্রায় ঐতিহ্যবাহী নৌকা বাইচ উৎসবকে ধরে রাখতে ধরে রাখতে নাটোর জেলা প্রশাসন এই প্রতিযোগিতার আয়োজন করে।
শুক্রবার (১২ সেপ্টেম্বর) বেলা ২টায় “নদী দূষণ রোধ করি, নির্মল বাংলাদেশ গড়ি” প্রতিপাদ্যে শুরু হয়নৌকা বাইচ প্রতিযোহিতা।
এই নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতা দেখতে সকাল থেকেই হাজার হাজার নারী-পুরুষ, শিশু-কিশোর, বৃদ্ধ সব বয়সের মানুষের উপস্থিতিতে বিলপাড় মুখরিত হয়ে ওঠে। সিংড়া তাড়াশ ও গুরুদাসপুর উপজেলাসহ আশে পাশের উপজেলা থেকে লোকজন নৌকা নিয়ে নির্ধারিত দূরত্ব বজায় রেখে বিলের মাঝখানে দুই দিকে হাজার হাজার নৌকার থাকা দর্শনার্থীরা উপভোগ করেছেন ওই নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতা। বাইচের নৌকাগুলো বাদ্যের তালে তালে বৈঠা মেরে ক্ষিপ্র গতিতে চলা, আর মাঝি-মাল্লাদের ছন্দোবদ্ধ বৈঠা চালানোর দৃশ্য দর্শকদের মুগ্ধ করে। বৈঠার তালে তালে জেগে ওঠে ছন্দ-আনন্দ আর দর্শকদের উল্লাস ও করতালি আনন্দের মাত্রা কয়েক গুণ বাড়িয়ে তোলে।

নৌকা বাইচকে কেন্দ্র করে পুরো এলাকা মিলন মেলায় পরিণত হয়। বাড়িতে বাড়িতে মেয়ে-জামাই, আত্মীয়-স্বজনসহ অতিথিদের জন্য পিঠা-পায়েসসহ হরেক পদের খাবারের আয়োজন। উৎসবকে কেন্দ্র করে বিলপাড়ে বসেছে গ্রামীণ মেলা।
বাইচ উৎসব দেখতে আসা সিংড়া উপজেলার আনন্দ নগর গ্রামের শহিদুল ইসলাম বলেন, কয়েকজন মিলে একটি নৌকা ভাড়া করে নৌকা বাইচ দেখতে এসেছি। দুপুরের খাবারের আয়োজনও ছিল নৌকাতেই। গ্রামীণ ঐতিহ্য নৌকা বাইচ দেখে খুব আনন্দ পেয়েছি।
বিলশা গ্রামের রমিজুল ইসলাম বলেন, একসময় প্রতিবছর নৌকা বাইচ অনুষ্ঠিত হতো। যা ছিল গ্রামের মানুষের বিনোদনের অংশ। তিনি প্রতিবছর এমন আয়োজনের দাবি জানান।
জেলা প্রশাসক আসমা শাহীন বলেন, গ্রামীণ ঐতিহ্য নৌকা বাইচ দেখতে মানুষের ঢল প্রমাণ করে এ উৎসবটি কতটা জনপ্রিয়। বিলুপ্তপ্রায় নৌকা বাইচ নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরার চেষ্টা মানুষের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক আরও দৃঢ় করেছে। গ্রামীণ সংস্কৃতিকে টিকিয়ে রাখতে প্রতিবছর এ ধরনের আয়োজনের চেষ্টা থাকবে।

আয়োজকরা জানান, ২ কিলোমিটার দূরত্বের এই নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতায় পাবনা, নাটোর, সিরাজগঞ্জ, মানিকগঞ্জ জেলার ২১টি নৌকা নিবন্ধন করলেও ১০০ ফুট দৈর্ঘ্যের ১২টি নৌকা প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের সুযোগ পান। প্রতিযোগিতায় প্রথম হয়ে মোটরসাইকেল জিতেছে সিরাজগঞ্জের বাঘাবাড়ির নিউ একতা এক্সপ্রেস। দ্বিতীয় হয়ে রেফ্রিজারেটর পুরস্কার জিতেছে শাহজাদপুর উপজেলার নিউ বাংলার বাঘ। তৃতীয় পুরস্কার একটি টিভি জিতেছে আল মদিনা।
প্রতিযোগিতা শেষে পুরুস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রশাসক আসমা শাহীনের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি ছিলেন স্বাস্থ্য বিভাগের সচিব সাইদুর রহমান। অন্যদের মধ্যে রাজশাহীর বিভাগীয় কমিশনার আজিম আহম্মেদ, ডিআইজি মোহাম্মদ শাজাহান, নাটোরের পুলিশ সুপার মো. তারিকুল ইসলাম, গুরুদাসপুরের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফাহমিদা আফরোজ প্রমুখ ।

উল্লেখ্য, ২ কিলোমিটার দূরত্বের এই নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতায় পাবনা, নাটোর, সিরাজগঞ্জ, মানিকগঞ্জ জেলার ২১টি নৌকা নিবন্ধন করলেও ১০০ ফুট দৈর্ঘ্যের ১২টিকে প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের সুযোগ পান। প্রতিযোগিতায় প্রথম হয়ে মোটরসাইকেল জিতেছে সিরাজগঞ্জের বাঘাবাড়ির নিউ একতা এক্সপ্রেস। দ্বিতীয় হয়ে রেফ্রিজারেটর পুরস্কার জিতেছে শাহজাদপুর উপজেলার নিউ বাংলার বাঘ। তৃতীয় পুরস্কার একটি টিভি জিতেছে আল মদিনা।#