স্টাফ রিপোর্টার
নাটোরের গুরুদাসপুর পৌরসভার সাবেক পৌর নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রবিউল হক ও হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা মো. নুরুজ্জামানের বিরুদ্ধে অবসরপ্রাপ্ত হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তার বকেয়া বেতন-ভাতা ও আনুতোষিক ভাতা আটকে রাখার অভিযোগ পাওয়া গেছে। পৌর নির্বাহী কর্মকর্তা ও হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তার বিধিবহির্ভূত কর্মকান্ডে সহযোগিতা না করে প্রতিবাদ করায় বকেয়া বেতন-ভাতা আটকে রাখা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন অবসরপ্রাপ্ত হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা আ. আ. ম সাঈদ শাহরিয়ার আব্বাসী। এ বিষয়ে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের নিকট আবেদন করেও অদ্যবধি হয়রানির শিকার হচ্ছেন বলে জানান ভুক্তভোগী ওই কর্মকর্তা।
খোজ নিয়ে জানা গেছে, আ. আ. ম সাঈদ শাহরিয়ার আব্বাসী ২০২২ সালের ২৪ অক্টোবর নাটোরের গুরুদাসপুর পৌরসভার হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তার পদ থেকে অবসরোত্তর ছুটিতে (পিআরএল) গমন করেন। শাহরিয়ার আব্বাসীর অভিযোগ চাকুরিতে স্বপদে থাকাকালীন সময়ে পৌর নির্বাহী কর্মকর্তা রবিউল হকের অবৈধ উচ্চতর স্কেলের বকেয়া বিলে স্বাক্ষর না করা (মন্ত্রনালয় কর্তৃক স্থগিত ছিল) ও ক্যাশিয়ার মোঃ নুরুজ্জামানের স্বেচ্ছায় চাকুরিতে ইস্তফা দেওয়া ও ছয় মাস পর পুনরায় অবৈধভাবে চাকুরিতে যোগদানের প্রতিবাদ করেন আ.আ.ম সাঈদ শাহরিয়ার আব্বাসী। এটিই পরবর্তীতে তার কাল হয়ে দাড়ায়। অবসর গ্রহণের পর শাহরিয়ার আব্বাসীকে তার প্রাপ্য বেতন-ভাতা, ল্যাম্ব গ্রান্ড এবং আনুতোষিক অর্থ প্রদানে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রনালয় থেকে পৌরসভা কর্তৃপক্ষকে কার্য্যাদেশ প্রদান করা হলেও পৌরসভা কর্তৃপক্ষ দীর্ঘদিন সেই কার্য্যাদেশ আমলে নেয়নি। শাহরিয়ার আব্বাসীর অভিযোগ, অভিযুক্ত দুই কর্মকর্তার যোগসাজেশে তার ১২ মাসের বকেয়া বেতন-ভাতা ও আনুতোষিক অর্থ আটকে রাখা হয়। বিষয়টি নিয়ে অবসরপ্রাপ্ত হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা শাহরিয়ার আব্বাস একাধিকবার সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয়ে যোগাযোগ করলে দীর্ঘ আড়াই বছর পর কয়েক ধাপে তাকে ১০ মাসের বেতন ভাতা প্রদান করা হয়। তবে এখনও শাহরিয়ার আব্বাসীর দুই মাসের বেতন-ভাতা ও ১৮ মাসের ল্যাম্ব গ্রান্ড সহ আনুতোষিক অর্থ আটকে রাখা হয়েছে। বর্তমানে রবিউল হক নাটোর পৌরসভায় এবং নুরুজ্জামান গুরুদাসপুর পৌরসভায় হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। অভিযোগ আরো বলা হয়, রবিউল হক ২০২২ সালের ৪ জুলাই নিজ ক্ষমতা বলে ক্যাশিয়ার মোঃ নুরজ্জামানের যোগসাজেশে উচ্চতর স্কেলে নিজ উৎসবভাতা গ্রহণ করেন। যা ২০২৩ সালের ১৩ জানুয়ারি নিরীক্ষা দলের দৃষ্টিগোচর হয় এবং গৃহিত অতিরিক্ত অর্থ ফেরতের জন্য অডিট আপত্তি তোলে। অভিযোগে আরো বলা হয়, পৌরসভার মেয়র শাহনেওয়াজ আলী মোল্লা নিয়োগ বোর্ড গঠন না করেই একাই পৌরসভার ক্যাশিয়ার নুরুজ্জামানকে ক্যাশিয়ার পদ থেকে হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা পদে পদায়ন করেন। পৌরসভায় চাকুরির পাশাপাশি গুরুদাসপুর মহিলা টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজে প্রভাষক হিসেবে দায়িত্ব পালনসহ কর্মচারীদের ভবিষ্যৎ তহবিলের চেক জালিয়াতিসহ নানা অভিযোগ রয়েছে নুরুজ্জামানের বিরুদ্ধে।
ভুক্তভোগী আ.আ.ম সাঈদ শাহরিয়ার আব্বাসী দাবি করে জানান, তিনি বদলিকৃত পৌর নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ রবিউল হকের অবৈধ উচ্চতর স্কেলের বকেয়া বিলে স্বাক্ষর না করা ও নুরুজ্জামানের স্বেচ্ছায় চাকুরি হতে ইস্তফা ও বিধিবহির্ভূতভাবে পুনরায় স্বপদে চাকুরিতে যোগদান করার প্রতিবাদ করার কারণে তাকে বিভিন্ন সময় হয়রানি করা হচ্ছে। অভিযুক্ত দুই কর্মকর্তার যোগসাজেশে নিয়মবহির্ভূতভাবে বেতন-ভাতা, ১৮ মাসের ল্যাম্ব গ্রান্ড এবং আনুতোষিক অর্থ আটকে রাখা হয়েছে। হয়রানি বন্ধপূর্বক তিনি এর প্রতিকার দাবি করেন।
গুরুদাসপুর পৌরসভার হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা মোঃ নুরুজ্জামান জানান, আমার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ সম্পন্ন মিথ্যা। এ বিষয়ে কোন কিছু করা আমার এখতিয়ার বহির্ভুত। এছাড়া, কলেজে কিছুদিন চাকুরি করলেও এখন আর শিক্ষকতা করি না।
অভিযুক্ত পৌর নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ রবিউল হক জানান, এটা মনগড়া ও মিথ্যা অভিযোগ। তার (আব্বাসী) সাথে আমার ব্যক্তিগত কোন শত্রুতা নেই। তিনি চাকুরিকালীন অতিরিক্ত ইনক্রিমেন্ট ও শিক্ষা ভাতা বাবদ অতিরিক্ত ১৪ লক্ষ টাকা নিয়েছেন। সেটি তাকে সমন্বয় করতে হবে। সরকারি বিধি অনুসারে সরকার কোন কর্মচারীর কাছে অতিরিক্ত অর্থ পাওনা থাকলে হিসাবে সেটি সমন্বয় নাহওয়া পর্যন্ত সরকার তাকে বকেয়া বেতন ভাতাসহ আনুষাঙ্গিক অর্থ দেবে না। এখানে আমার করার কিছু নেই। বেতন-ভাতা পেতে হলেও তাকে অবশ্যই পৌর কর্তৃপক্ষের সাথে বসে হিসাব সমন্বয় করতে হবে।
এ বিষয়ে কথা বলতে পৌর মেয়র শাহনেওয়াজ আলী মোল্লার মুঠোফোনে একাধিকবার কল দিলে তার ব্যবহৃত নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়।
নাটোরের জেলা প্রশাসক (দায়িত্বপ্রাপ্ত) ও স্থানীয় সরকারের বিভাগের উপপরিচালক (অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত) মোঃ মাছুদুর রহমান জানান, বিষয়টি দেখার জন্য উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে বলে দিচ্ছি।