স্টাফ রিপোর্টার
নাটোরের বড়াইগ্রামের কচুটিয়ার নন্দকুঁজা নদীর পেট চিরে জন্ম নেওয়া মির্জামামুদ নদীটি গুরুদাসপুর উপজেলার চাপিলা ইউনিয়নের কৈডিমা, সোনাবাজু, সিধুলীর মাধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে চাটমোহর হয়ে খর¯্রােতা বড়ালে গিয়ে মিলেছে। চলতি মাসের ৪ তারিখে বিএডিসির ঠিকাদার নদীটির কৈডিমা উচ্চ বিদ্যালয়ে থেকে খনন কাজ শুরু করেন। কিন্তু চাঁদার দাবিতে দুই দফায় নদীর খনন কাজে বাঁধা দিয়েছে একদল দুর্বৃত্ত।
সবশেষ ১০ ফেব্রæয়ারি শনিবার সন্ধ্যায় খননযন্ত্রের চাবি আবারো ছিনিয়ে নেয় ওই দুর্বৃত্তরাইূ। এঘটনায় রাতেই গুরুদাসপুর থানায় অভিযোগ দিয়েছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। পরে গতকাল রোববার দুপুরে গুরুদাসপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. উজ্জল হোসেনের উপস্থিতিতে বিকল্প চাবির মাধ্যমে খনন কাজ শুরু করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। তবে ছিনিয়ে নেওয়া চাবিটি এখনো উদ্ধার হয়নি।
জানাযায়- মির্জা মামুদ নদীটিতে ৬০ বছর ধরে কোনো প্রবাহ নেই। পলি জমে ভড়াট হওয়া নদীর পেটজুড়ে চাষাবাদ করছিলেন স্থানীয় লোকজন। শত বছরের পুরনো নকশা ধরে এই নদীর দুই কিলোমিটার অংশে খনন কাজ শুরু হয়েছে।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধীকারি মকবুল হোসেন বলেন- খনন কাজ শুরুর দুই দিন পরেই চাঁদা দাবি করে খননযন্ত্রের চাবি ছিনিয়ে নিয়েছিলেন স্থানীয় এক প্রভাবশালী নেতা। পরে বিএডিসি অফিসের মধ্যস্থতায় চাবিটি ফেরত পাওয়া যায়। শনিবার সন্ধ্যায় কৈডিমা অংশের খনন কাজ করার সময় এক্সকেভেটরের চালককে ভয় দেখিয়ে আবারও চাবি ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন- নদী খননে স্থানীয় লোকজনের ব্যাপক উৎসাহ পেয়েছেন তারা। কিন্তু স্থানীয় নেতা-কর্মীদের বিরূপ আচরণে খনন কাজ পিছিয়ে যাচ্ছে। তারা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
বিএডিসি অফিস জানিয়েছে- পাবনা, নাটোর, সিরাজগঞ্জ সেচ প্রকল্পের (পানাসি) আওতায় পুড়নো মির্জামামুদ নদীর সাড়ে ৪ কিলোমিটার অংশ খনন করা হবে। এরমধ্যে প্রথম পর্যায়ে দুই কিলোমিটার নদী ৬০ ফুট প্রস্থ ও ১১ ফুট গভির করে খনন করা হচ্ছে। ৪০ লাখ টাকা ব্যায়ে যৌথভাবে খনন কাজ করছে গোপালগঞ্জের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান শেখ নাছিমুল গণি ও আরাফাত আজম।
খোঁজ নিয়ে জানাযায়- গুরুদাসপুর উপজেলার বাঘমারা, মহারাজপুর, পায়েকপুর, ধানুড়া, পাঁচপুড়–লিয়া ও রানীনগর বিলের বুক চিরে মির্জমামুদ নদীটি বয়ে গেছে। নদীর খনন কাজ শেষ হলে নির্বিঘেœ এসব বিলের অন্তত ৫ হাজার ৮০০ হেক্টর জমির সেচ নির্ভর চাষাবাদ করা যাবে। পাশাপাশি উন্মুক্ত জলারাশিতে মাছ শিকার করতে পারবেন স্থানীয় লোকজন।
স্থানীয় ফয়েজুর রহমান, গোলাম রাব্বানি, ফয়জাল আহম্মেদ, আকবর আলী, খুরশেদ আলম জানান- মির্জামামুদ নদীটি অনেক প্রাচীন। এই নদীর বুকে তারা চাষাবাদ করেছেন। এখন নদীটি খনন করা হচ্ছে। এতে নদীর তীরবর্তী মানুষ ব্যাপকভাবে লাভবান হবেন। তারা নির্বিঘেœ নদী খনন কাজে প্রশাসনের সহযোগীতা দাবি করেছেন।
বিএডিসি সহকারি প্রকৌশলী সাঈদুর রহমান বলেন- চাঁদার দাবিতে সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার সুযোগ নেই। নদী খননে তারা পুলিশের হস্তক্ষেপ দাবি করেন।
গুরুদাসপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. উজ্জল হোসেন বলেন- নদী খনন কাজের বাধা দেওয়ার ঘটনায় তিনি অজ্ঞাতনামা ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগ পেয়েছেন। তিনি সরেজমিনে গিয়ে খনন কাজ চালু করে দিয়েছেন। রাজনৈতিক দলের নাম ভাঙ্গিয়ে কেউ সরকারি কাজে বাধা দিতে পারবে না। পুলিশ ওই কাজের ওপর বিশেষ নজরদারি করছে। ছিনিয়ে নেওয়া চাবিটি উদ্ধার করা হচ্ছে।