কন্যা সন্তানের মা হলেন ধর্ষণের শিকার ৪র্থ শ্রেণির সেই অন্তঃস্বত্বা স্কুল ছাত্রী

  • শনিবার, ২ সেপ্টেম্বর, ২০২৩
কন্যা সন্তানের মা হলেন ধর্ষণের শিকার ৪র্থ শ্রেণির সেই অন্তঃস্বত্বা স্কুল ছাত্রী#সিংবাদ শৈলী

স্টাফ রিপোর্টার
নাটোরের গুরুদাসপুরে ধর্ষণের শিকার হয়ে চতুর্থ শ্রেণির এক স্কুলছাত্রী অন্তঃসত্বা স্কুল ছাত্রীর সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে কন্যা সন্তানের জন্ম দিয়েছেন। মা ও শিশু উবয়েই সুস্থ রয়েছেন। গুরুদাসপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেকের পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা বলেন, অপ্রাপ্ত বয়স্ক শিশুর সিজারিয়ান অপারেশন সফলভাবেই সম্পন্ন হয়েছে। অপরদিকে র্ধসণের অভিযোগে র‌্যাব প্রতিবেশী দুসম্পর্কের নানা জাহিদুল খাকেঁ (৫০) করে থানা পুলিশে হস্তান্তর করে। পরে আদালত তাঁর জামিন না মঞ্জুর করে কারাগারে প্রেরন করে।
হাসপাতাল সুত্রে জানা যায়, শনিবার ২ সেপ্টম্বর গুরুদাসপুর স্ব্যাস্থ্য কমপ্লেক্সে সিজারের মাধ্যমে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ওই স্কুলছাত্রীর কোল জুড়ে জন্ম নিয়েছে ফুটফুটে এক কন্যা সন্তান । বাঁচ্চাটিকে এক নজর দেখতে উৎসুক জনতার ভির জমেছে হাসপাতালে।
ওই স্ব্যাস্থ্য কমপ্লেক্সের গাইনি বিশেজ্ঞ ডাক্তার নারগিস তানজিমা ফেরদৌস ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা কর্মকর্তা ডঃ মোজাহিদুল ইসলাম জানান, স্কুল ছাত্রীটি ছোট থাকায় মা ও নবজাতক কে বাঁচানো নিয়ে দুশ্চিন্তায় ছিলাম। যা হোক অবশেষে সফল অস্ত্র পাচার হয়েছে। মা ও নবজাতক সুস্থ্য রয়েছে।

ওই স্কুল ছাত্রীর দাদী হালিমা খাতুন(৬০) জানান, আমি গরিব মানুষ অন্যের বাড়িতে কাজ করে অতি কষ্টে সংসার চালাই। এব্যাপারে আমাদের কষ্টের কথা ভেবে প্রয়াত সদস্য অধ্যাপক আব্দুল কুদ্দুস ১৫দিন আগে ২০হাজার টাকা দিয়েছিলেন । এগুলো দিয়েই ওর সেবা করেছি। এখন নানা চিন্তা আমাকে আঁকড়ে ধরেছে। কি করবো ভেবে পাচ্ছি না। নবজাতকটিকে যদি কেউ দত্তক নিতো তাহলে কিছুটা হলেও সস্তি পেতাম।
উল্লেখ্য, সংসারে পারিবারিক কলহের কারণে শিশুটির বাবা-মার সংসার ভেঙে যায়। পরবর্তীতে বাবা ও মা অন্যত্র বিয়ে করে। এরপর থেকে শিশুটি তার নানীর কাছে থাকতো। এলাকার এক দুসম্পর্কের নানা জাহিদুল খাঁ মাঝে মধ্য শিশুটিকে নিয়ে তার ভ্যানে করে স্কুলে আনা নেওয়া করতো। পরে ৫ মাস পর শিশুটির শারীরিক পরিবর্তন দেখে পরিবারের মানুষ জিজ্ঞেস করলে কোনো উত্তর দেয়নি শিশুটি। তবে পরীক্ষা করার পর গর্ভে সন্তান থাকার কথা জানতে পারে পরিবার। পরবর্তীতে স্থানীয় একটি ক্লিনিকে নিয়ে আল্ট্রাসনোগ্রাফি করার মাধ্যমে চিকিৎসক অন্তঃসত্বার বিষয়টি জানা যায়। পরে শিশুটি এ ঘটনা তার পরিবারকে খুলে বলে। পরে গত ১৮ জুন শিশুটির দাদী হালিমা খাতুন বাদী হয়ে গুরুদাসপুর থানায় একটি ধর্ষণ মামলা দায়ের করেন।
দীর্ঘ সময় পরে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব-৫) গত (২৬ আগস্ট) সকালে র‌্যাব-৫ এর অধিনায়ক ফরিদপুর জেলার আলফাডাঙ্গা থানার হেলেঞ্চা এলাকা থেকে জাহিদুল খাঁকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতার হওয়া জাহিদুল খাঁ গুরুদাসপুর উপজেলার ধারাবারিষা ইউনিয়নের দক্ষিণ নাড়িবাড়ি গ্রামের মৃত কালু খাঁর ছেলে।
ওই শিশুটি জানায়, অনেক আগে থেকেই তাকে আদর করতেন নানা জাহিদুল ইসলাম। বিভিন্ন সময়ে খাবার জিনিস কিনে দিতেন। প্রায়ই তার ভ্যানযোগে তাকে স্কুলে আনা-নেওয়া করতেন। ঘটনার দিন স্কুলে যাওয়ার জন্য গোসল করে বাড়ির ভেতর কাপড় পরিবর্তন করছিল শিশুটি। বাড়িতে কেউ না থাকার সুযোগে ধর্ষক জাহিদুল ইসলাম বাড়ির ভেতর ঢুকে ঘরে গিয়ে কাপড় পরিবর্তন করতে বলে। ঘরে ঢুকতেই পেছন থেকে তাকে জাপটে ধরে মুখে গামছা পেঁচিয়ে ধর্ষণ করেন। বিষয়টি কাউকে জানালে শিশুটিকে মেরে ফেলার হুমকি দেন তিনি। ফলে ওই ঘটনা কাউকে বলতে সাহস পায়নি শিশুটি।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোজাহিদুল ইসলাম জানান, আল্ট্রাসনো রিপোর্ট অনুযায়ী ৮ সেপ্টেম্বর সন্তান প্রসবের তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে শারীরিক অবস্থাসহ পরবর্তী নানা শারীরিক ও মানসিক সমস্যা এড়াতে তার সিজারিয়ানের প্রস্ততি নেওয়া হয়।
গুরুদাসপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শ্রাবণী রায় বলেন, শিশুটিসহ ভূক্তভোগী পরিবার আমার কাছে আসেন। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে অন্তঃসত্বা শিশুটির দায়িত্ব নেওয়া হয়েছে। অপ্রাপ্ত বয়সে মা হতে গিয়ে নানা আশঙ্কার হতে পারে। সে কথা চিন্তে করে সরকারিভাবে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে শিশুটির প্রসব করানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে শিশুকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
COPYRIGHT 2023 sangbadshoily, ALL RIGHT RESERVED
Site Customized By NewsTech.Com