উত্তরা গণভবনে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠককে কেন্দ্র করে চলছে উন্নয়ন কাজ#সংবাদ শৈলীউত্তরা গণভবনে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠককে কেন্দ্র করে চলছে উন্নয়ন কাজ#সংবাদ শৈলী

স্টাফ রিপোর্টার

রাজধানীর বাইরে বাংলাদেশ সরকারের প্রধান মন্ত্রীর একমাত্র সরকারি বাসভবন নাটোরের ঐতিহ্যবাহী উত্তরা গণভবন। অতীতে বিভিন্ন সরকারের সময় এখানে আনুষ্ঠানিকতার অংশ হিসেবে একাধিকবার মন্ত্রিসভার বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। এবার সেখানে বসতে পারে অন্তবর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক। এ লক্ষ্যে গণভবনের ভেতর ও বাইরের অংশে চলছে দ্রুতগতির সংস্কারকাজ।
গণপূর্ত বিভাগ উত্তরা গণভবনের উন্নয়ন ও সংস্কার কাজের জন্য ২ কোটি ২৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ পায়। শুধু ভবনের অভ্যন্তরীণ সুবিধাই নয়, নিরাপত্তা জোরদারসহ উত্তরা গণভবনমুখী সড়কেও চলছে উন্নয়নকাজ।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি এ নিয়ে উপদেষ্টা পরিষদের বেশ কয়েকজন সদস্য ও সরকারের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তারা গণভবন পরিদর্শন করে প্রস্তুতি পর্যালোচনা করেছেন। বিশেষ করে গত ৮ নভেম্বর আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল ও চলতি সপ্তাহের ৬ ডিসেম্বর শিল্প ও গণপূর্ত উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খানের উত্তরা গণভবন পরিদর্শনের খবরে নাটোরবাসীর মধ্যে উপদেষ্টা মন্ডলীর বৈঠক নিয়ে চলছে গুঞ্জন।
সরেজমিনে উত্তরা গণভবনে গিয়ে দেখা যায়, উত্তরা গণভবনের ভেতরের সংস্কার কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন শ্রমিকরা। উত্তরা গণভবনের চারদিকের প্রাসাদের বাইরে থাকা দীর্ঘ দিনের জঙ্গলও পরিষ্কার করা হয়েছে। উত্তরা গণভবনের মূল প্যালেস বা রাষ্ট্র প্রধানের প্রশাসনিক ভবনে নতুন এসি, নতুন পর্দা সংযোজন, ত্রুটিপূর্ণ দরজা, চেয়ার, টেবিল মেরামতের কাজ চলছে। এছাড়াও নিরাপত্তা জোরদারের জন্য পুরনো সিসিটিভি ক্যামেরার পাশাপাশি নতুন করে উন্নতমানের ২১টি সিসিটিভি ক্যামেরা প্রতিস্থাপনেরও কাজও শেষের দিকে। এই ক্যামেরা পর্যবেক্ষণের জন্য মূল ফটকের ভেতরের একটি কক্ষে এলইডি মনিটর বসানো হয়েছে।
নাটোরের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষরা চায়, উত্তরা গণভবনে আবারও অনুষ্ঠিত হোক সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক এবং এর ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকুক।
নাটোরের শহরের বাসিন্দা সাংস্কৃতিক কর্মী খপেন্দ্র নাথ রায় কালের কণ্ঠকে বলেন, বিগত বিভিন্ন সরকারের আমলে উত্তরা গণভবনে সরকার প্রধানদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। আমরা চাই অন্তর্র্বতী সরকারও তাদের একটি বৈঠক এখানে করুক। সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ের বৈঠক আবারও এখানে হলে নাটোরের মর্যাদা বাড়বে, সেই সঙ্গে বাড়বে উত্তরা গণভবনের জাতীয় গুরুত্ব।
নাটোর শহরের বাসিন্দা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটি নাটোর ইউনিটের সভাপতি কালের কণ্ঠকে বলেন, প্রায় প্রতিটি সরকার প্রধান উত্তরা গণভবনে বৈঠক করেছেন। এরই ধারাবাহিকতায় আমরাও চাই অন্তর্র্বতী সরকারের একটি বৈঠক এখানে অনুষ্ঠিত হোক।
এদিকে উত্তরা গণভবনে উপদেষ্টা পরিষদের সম্ভাব্য বৈঠক নিয়ে নাটোরের জেলা প্রশাসক আসমা শাহীন কোনো আনুষ্ঠানিক মন্তব্য না করলেও তিনি জানান, নিরাপত্তা জোরদার, অভ্যন্তরীণ ত্রুটি সংস্কার এবং সৌন্দর্যবর্ধন এসব কাজ এখন দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে।
আসমা শাহীন বলেন, প্রতিবছর অনেক পর্যটকসহ বিভিন্ন সময় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষরাও উত্তরা গণভবন পরিদর্শনে করতে আসেন। তাছাড়া এটি একটি ঐতিহ্যবাহী পর্যটন কেন্দ্র। সুকরাং গণভবনটি সংস্কারের প্রয়োজন রয়েছে। এখানে একটি বড় বরাদ্দ পাওয়ার প্রেক্ষিতে সংস্কার কাজ চলছে। রাজশাহীর বিভাগীয় কমিশনার ড. আ ন ম বজলুর রশীদ মুঠোফোনে কালের কণ্ঠকে বলেন, সরকারের তরফ থেকে উপদেষ্টা মন্ডলীর বৈঠকের প্রোগ্রাম হলে বিভাগীয় দপ্তর থেকে দেখভাল করা হবে। তখন অবশ্যই তা জানানো হবে।
গত শনিবার উত্তরা গণভবন পরিদর্শনে এসে শিল্প, গৃহায়ন ও গণপূর্ত উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান বলেছেন, আমাদের কাজ হচ্ছে উত্তরা গণভবনকে তৈরি রাখা। সভা (উপদেষ্টা মন্ডলীর সভা) কখন হবে তার নির্ধারিত তারিখ নাই। তবে প্রত্যেক সরকারের আমলেই রেওয়াজ অনুযায়ী সাধারণত একটি বা আরো বেশি সভা হয়। দীর্ঘদিন উত্তরা গণভবন অবহেলিত ছিল আমরা এটাকে তৈরি করলাম।
উল্লেখ্য, পাকিস্তান আমলে দিঘাপতিয়া জমিদার বাড়ি গভর্ণর হাউজ হিসেবে ঘোষণা করা হয়। দেশ স্বাদীনের পর ১৯৭২ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান গভর্ণর হাউজের নাম পরিবর্তন করে উত্তরা গণভবন ঘোষণা করেন। এরপর শেখ মুজিবুর রহমানের মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠকও অনুষ্ঠিত হয় এখানেই। পরে বিভিন্ন সরকারও আনুষ্ঠানিকতার অংশ হিসেবে এখানে মন্ত্রিসভার বৈঠক করেছে। ১৯৮০ সালে জিয়াউর রহমান, পরবর্তীতে এরশাদ, সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া ১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনার সরকার একবার বৈঠক করেন।

By admin

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *