স্টাফ রিপোর্টার
আওয়ামী লীগের দুইপক্ষের কোন্দল হামলা পাল্টা হামলায় পরিনত হয়েছে গুরুদাসপুর। ২ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হওয়ায় এই হামলায় দুইপক্ষের অন্তত ৩০টি বাড়িতে ভাংচুর শেষে লুটপাট চালানো হয়েছে। আহত হয়েছেন ২২ জন। চারটি গ্রাম পুরুষশূণ্য হওয়ায় এসব এলাকায় নারীদের ওপর হামলা পাল্টা হামলা হয়েছে।
সর্বশেষ সোমবার (১৮ সেপ্টেম্বর) ভোর ছয়টার দিকে উপজেলার ধারাবারিষা ইউনিয়নের ধারাবারিষা মেল্লাপাড়া গ্রামে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক রিপন সরকারের সমর্থকরা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মতিনের সমর্থক বিল্লাল হোসেনের বাড়িতে হামলা চালিয়ে মারধর ও লুটপাট করে। এঘটনায় বিল্লালসহ তার ছেলে ইমরান (৩৫), স্ত্রী সাবিহা (৫৫), মেয়ে নাজমা (১৮) আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে ইমরানকে আশংকাজনক অবস্থায় নাটোর আধুনিক সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়।
তবে রিপন সরকার পাল্টা অভিযোগ করে বলেন, মতিন গ্রæপের সমর্থক বিল্লাল ও তার লোকজন সোমবার ভোর ৫টার দিকে হামলা চালিয়ে রহিম সরকার (৬০), ইসমাইল মোল্লা (৫৫), হবি সরকার (৫০), আমির সরকার (৫৫) ও শিল্টু সরকারকে (৪০) পিটিয়ে গুরুতর যখম করেছে। আহতদের মধ্যে আব্দুর রহিম, ইসমাইল ও হবিকেও আশংকাজনক অবস্থায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে।
এভাবে গত ২ সেপ্টেম্বর থেকে ধারাবারিষা মোল্লাপাড়া, ফকিরপাড়া, দাদুয়া ও তালবাড়িয়া গ্রামে ধারাবাহিকভাবে এসব সহিংসতার ঘটনা ঘটছে। তবে এঘটনায় কোনো পক্ষই থানায় মামলা দায়ের করেননি। বরং আইনের আশ্রয় না নিয়ে দুইক্ষের বিরুদ্ধেই হামলা সংঘর্ষে জড়ানোর অভিযোগ রয়েছে। গত ১৬ দিন ধরে চলা এই সহিংসতা রোধে পুলিশি ভূমিকা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন গুরুদাসপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল মতিন।
খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, মূলত নাটোর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি স্থানীয় সংসদ সদস্য আব্দুল কুদ্দুসের মৃত্যুর পর থেকেই আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের মধ্যে বিরোধ নৃশংসতা শুরু হয়। বিশেষ করে উপনির্বাচনের জন্য বড়াইগ্রামের উপজেলা চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা ডা. সিদ্দিকুর রহমান পাটোয়ারী দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার পর থেকে তার কর্মী-সমর্থকরা বেপরোয়া হয়ে উঠেন। এছাড়া প্রয়াত সংসদ সদস্য পক্ষের উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মতিন গ্রæপও ওই প্রতিপক্ষের সাথে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে।
হাসপাতালে শুয়ে থাকা বিল্লাল হোসেন জানান, তারা এমপি সমর্থক হওয়ায় ধারাবারিষা ফকিরপাড়ার মৃত আহাদ আলী হাদার ছেলে মো. হাবিব মন্ডল ও তার ফুফাতো ভাই রিপন সরকার, আমিনুল হক ওরফে আমানত হাজীর নেতৃতে¦ ধারাবারিষা ফকির পাড়া, মোল্লা পাড়া, তালবাড়িয়া ও দাদুয়া গ্রামে তার পরিবারের ওপর নৃশংস হামলা চালিয়ে লুটপাট করে। হামলা চালিয়ে গরু-ছাগলসহ বাড়ির বিভিন্ন মালামাল ও নগদ টাকা, ভ্যান, অটোবাইকসহ জিনিসপত্র লুট করে নিয়ে গেছে। ওই সন্ত্রাসিদের ভয়ে ভুক্তভোগীরা বাড়িতে থাকতে পারছেনা। তারা চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।
যুবলীগ কর্মী হাবিব মÐল অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, মতিন চেয়ারম্যান ও তার ছেলে সোহানের নেতৃত্বে এলাকার সাধারণ মানুষের ওপর হামলা চালানো হয়েছে। তিনি এই হামলার বিচার চান।
গুরুদাসপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. মোনোয়ারুজ্জামান বিবাদমান দুইপক্ষের সংর্ঘষের বিষয় নিশ্চিত করে বলেন, কোনো পক্ষই মামলা করেনি। মামলা হলে আইনানুগ ব্যববস্থা নেওয়া হবে।