স্টাফ রিপোর্টার
নাটোরের বড়াইগ্রামে য় ফারজানা ইয়াসমিন প্রিয়া (২২) নামে এক নারী ইপিজেড কর্মীকে নির্মমভাবে কুপিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। শুক্রবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে ধানাইদহ-ল²ীকোল সড়কের মশিন্দা বিলের মাঝখানে চৌরাস্তা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। নিহত প্রিয়া উপজেলার মেরিগাছা গ্রামের শহীদুল ইসলামের মেয়ে এবং রংপুরের অনিক হাসানের স্ত্রী। প্রিয়া ঈশ^রদী ইপিজেডে কর্মরত ছিলেন । অনৈতিক প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় কর্মস্থল থেকে ফেরার পথে তাকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় মূল অভিযুক্ত উপজেলার মেরিগাছা গ্রামের মৃত ওয়াজউদ্দিনের ছেলে লকিউদ্দিন (৪২) ও একই গ্রামের আব্দুল মমিনের ছেলে প্রতিবন্ধী ভ্যানচালক বুলবুল আহমেদ (৩৫) কে রাতেই আটক করেছে পুলিশ।
নিহতের স্বজন ও থানা সুত্রে জানা যায়, প্রিয়া মেরিগাছা গ্রামে বাবার বাড়িতে থেকে ঈশ^রদী ইপিজেডে একটি গার্মেন্টস কারখানায় কাজ করতেন। কাজে যাওয়া-আসার পথে প্রতিবেশী লকিউদ্দিন তাকে কু-প্রস্তাব দেয়াসহ নানাভাবে উত্যক্ত করে আসছিল। এর জের ধরে মাস ছয়েক আগে প্রিয়ার স্বজনরা লকিউদ্দিনকে মারধোরও করেন। শুক্রবার সন্ধ্যায় গার্মেন্টস ছুটি হলে প্রিয়া বাসে এসে রাত সাড়ে আটটার দিকে কয়েন বাজারে নামেন। এরপর প্রতিদিনের মত প্রতিবেশী বুলবুলের ব্যাটারীচালিত অটোভ্যানে চড়ে বাড়ি ফিরছিলেন। পথে মশিন্দা বিলের মাঝখানে চৌরাস্তা এলাকায় ভ্যানচালকের সহযোগিতায় লকিউদ্দিনসহ কয়েকজন যুবক তাকে জোরপূর্বক ভ্যান থেকে নামিয়ে নিয়ে যায়। এ সময় প্রিয়া তার বাবার মোবাইলে কল দিয়ে লকিউদ্দিন তাকে ধরে নিয়ে যাচ্ছে বলতেই কলটি কেটে যায়। এরপর দুর্বৃত্তরা তাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাথাড়ি কুপিয়ে হত্যা করে বিলের মধ্যে লাশ ফেলে রেখে যায়। পরে নিহতের স্বজনসহ পুলিশ খোঁজাখুঁজির এক পর্যায়ে বিলের মধ্যে পাটের জমির পাশ থেকে তার লাশ উদ্ধার করেন।
নিহত প্রিয়ার বাবা শহিদুল ইসলাম বলেন, প্রিয়ার বাড়ি ফিরতে দেরী দেখে বুলবুলকে ফোন দিলে সে জানায় প্রিয়া এখনো পৌছেনি। আমি কয়েন বাজারেই আছি। পরে তারা কয়েন বাজারে গিয়ে খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন প্রিয়াকে নিয়ে বুলবুল অনেক আগেই রওনা দিয়েছে। এরপর তারা খুঁজাখুঁজি শুরু করেন। অপরদিকে মেয়ের ফোন পেয়ে তারা বিলের মধ্যে গিয়ে খুজতে শুরু করেন। অপরদিকে একজন অটোযাত্রী মেয়ের চিৎকার শুনতে পেয়ে পুলিশকে জানায়। তিনি বলেন লকি উদ্দিন আমার মেয়েকে বাঁচতে দিলনা। তাদের সুখের সংষার শেষ করে দিল। তিনি এঘটনার সুষ্ঠু ু বিচার দাবি করেন। প্রিয়ার স্বামী অনিক হাসান জানান, বিবাহিত জীবনে তাদের একটি ৮মাসের শিশু সন্তান রয়েছে। তিনি ঢাকায় চাকরী করতেন। কিন্তু স্বামী- স্ত্রী এক সংগে থাকার জন্য ঢাকার চাকুরী ছেড়ে ঈম্বরদীতে চাকুরী নিয়ে ঈশ্বরদীতে বাসা ঠিক করেন। কিন্তু ছোট সন্তানকে বাড়িতে রেখে দুজনেই কর্মস্থলে গেলে শিশুটিকে দেখার কেউ ছিল না। একারণে প্রিয়া বলেছিল কিছুদিন বাবার বাড়ি থেকেই চাকরী করি। ছেলেটি আর একটু বড় হলে এক সঙ্গেই থাকবো। কিন্তু তার আগেই তাদের স্বপ্ন শেষ হয়ে গেল। তিনি কান্না জড়িত কণ্ঠে এ হত্যাকান্ডের বিচার দাবি করেন।
বড়াইগ্রাম সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শরীফ অঅল রাজীব বলেন, হত্যাকান্ডের সংবাদ পাওয়ার পর থেকে আসামী গ্রেফতার পুরো সময়টিতেি তনি ছিলেন। তিনি বলেন, প্রিয়ার ঘার পিঠ, বুক পা সহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। তবে ধর্ষণের কোন আলামত আমরা পাইন। এটি ময়না তদন্ত রিপোর্ট পেলে বিস্তারিত জানা যাবে। তিনি বলেন ইতমধ্যেই লকি উদ্দিন হত্রাকান্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে। আগামীকাল তার জবানবন্দী ১৬৪ ধারায় রেকর্ড করার জন্য আদালতে সোপর্দ করা হবে। অপরদিকে নিহত প্রিয়ার বাবা শহীদুল ইসলাম বাদী হয়ে লকি উদ্দিন ,ভ্যান চালক বুলবুল আহমেদকে নামীয় এবং অজ্ঞাত আরো ৩/৪জনকে অভিযুক্ত করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। ধর্ষণ হয়েছে কিনা জানার জন্য নাটোর সদর হাসপাতালে ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক ডাঃ কামাল হোসেন বলেন ধারালো অস্ত্রের আঘাতে তাকে হত্যা করা হয়েছে। আমার চিৎিসক জীবনে এত অসংখ্য আঘাত অঅমি দেখিনি। তাকে নৃশংসভাবে কুচিয়ে খুচিয়ে হত্যা করা হয়েছে। তবে ধর্ষণের কোন আলামত পাইন। ভিসেরা রিপোর্ট পেলে বিস্তারিত জানা যাবে। তিনি বলেন , ময়না তদন্ত শেষে প্রিয়ার লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।